ইন্দোনেশিয়ায় আইনপ্রণেতাদের বিলাসবহুল সুবিধা নিয়ে শুরু হওয়া সহিংস বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন কমিশন ফর দ্য ডিসঅ্যাপিয়ার্ড অ্যান্ড ভিকটিমস অব ভায়োলেন্স (কনট্রাস)।
সংগঠনটি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায়, সোমবার পর্যন্ত মোট ২৩ জন নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যাচাই শেষে ২০ জনকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা মূলত জাভা দ্বীপের বান্দুং ও দেপক শহর এবং রাজধানী জাকার্তার বিভিন্ন প্রশাসনিক অঞ্চলের বাসিন্দা।
গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। ঘটনাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক তরুণ ডেলিভারি কর্মীকে আধাসামরিক পুলিশ ইউনিটের হাতে হত্যার ভিডিও পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আন্তারা জানায়, শুধু জাকার্তা থেকেই ২৫ আগস্টের পর থেকে এক হাজার ২৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে এনজিও লকাতারু ফাউন্ডেশনের পরিচালক ডেলপেদ্রো মারহায়েনও রয়েছেন। তাঁকে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় জাকার্তা পুলিশ।
পুলিশের দাবি, জাকার্তায় সহিংস কার্যক্রমে জড়িত সন্দেহে আরও ৩৮ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে মলোটভ ককটেল নিক্ষেপ ও অবকাঠামোতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় জাভায় শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ জনকে আটক করা হয়, যাদের বেশিরভাগের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এর মধ্যে ৪৬ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করেছে পুলিশ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর ইন্দোনেশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বিক্ষোভকারীদের দেশদ্রোহী বা সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেছে।
প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ানতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পার্লামেন্ট সদস্যদের বিলাসবহুল সুবিধা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। তবুও বিক্ষোভ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
সোমবার জাকার্তায় সেনা মোতায়েন করা হয় এবং পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে শত শত মানুষ সমবেত হয়। বান্দুং, পালেম্বাং, যোগ্যাকার্তা, মাকাসার, বানজারমাসিনসহ একাধিক শহরে নতুন করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
বান্দুং শহরে প্রাদেশিক পরিষদ ভবনে মলোটভ ককটেল হামলার পর পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের শিক্ষার্থীরা কোনো সহিংসতায় জড়িত ছিল না।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক জানিয়েছে, সম্ভাব্য অস্থিরতার কারণে লাইভ ফিচার স্থগিতের সিদ্ধান্ত তারা তিন দিন পর প্রত্যাহার করেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বিক্ষোভ দমন নয়, বরং সংলাপের মাধ্যমে সমাধান খোঁজাই হবে সংকট নিরসনের কার্যকর উপায়।