Tuesday, November 18, 2025
Homeরাজনীতিশেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করবে না ভারত, প্রত্যর্পণ চুক্তিতেই ‘ফাঁক’

শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করবে না ভারত, প্রত্যর্পণ চুক্তিতেই ‘ফাঁক’

রায়ের পর সংক্ষিপ্ত বিবৃতি ভারতের, ট্রাইব্যুনালের নাম উদ্ধৃতি চিহ্নে; মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়ার অবস্থানেই অনড় দিল্লি

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিয়েছে ভারত। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে ট্রাইব্যুনালের নামটি উদ্ধৃতি চিহ্নের (“ ”) মধ্যে রাখা হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় ভারত এই প্রতিষ্ঠানটির স্বীকৃতি নিয়ে পুরোপুরি একমত নয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই রায়ের ফলে শেখ হাসিনার বিষয়ে দিল্লির অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসবে না এবং তাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করার প্রশ্নই ওঠে না।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পৌঁছানোর পর থেকে তাকে অস্থায়ী আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ভারতের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। নয়াদিল্লির ভাষ্য, মানবিক কারণে তাকে অস্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে এবং এর কোনো বৃহত্তর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পরেও ভারতের এই অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

এখন প্রশ্ন উঠেছে ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে বাংলাদেশের করা অনুরোধ নিয়ে। গত বছরের ডিসেম্বরে পাঠানো একটি কূটনৈতিক নোট বা ‘নোট ভারবাল’ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করলেও নয়াদিল্লি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে নীরব রয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এই চুক্তিতে অসংখ্য আইনি ফাঁক রয়েছে যা তাদের এই প্রত্যর্পণের অনুরোধ বিলম্বিত বা প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ দেয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় আসায়, একজন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ভারতকে হয়তো এখন আরও বেশি চাপের মুখে পড়তে হতে পারে। তবুও, ভারতের মূল অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম।

২০১৩ সালের ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ “রাজনৈতিক” হলে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা যায়। তবে হত্যা, গুম, গণহত্যা, বোমা হামলা এবং সন্ত্রাসবাদের মতো অপরাধকে রাজনৈতিক হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের মতো অভিযোগ থাকায় ভারতের পক্ষে এগুলোকে ‘রাজনৈতিক’ হিসেবে দেখানো কঠিন হবে।

তবে চুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা রয়েছে, যা ভারতকে এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সুযোগ করে দিতে পারে। চুক্তি অনুযায়ী, যদি ভারত মনে করে যে, বিচারের স্বার্থেสุจริতভাবে (in good faith) অভিযোগগুলো আনা হয়নি, তবে তারা প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ভারতে কোনো মামলা চলমান নেই। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারত এই ধারাটি ব্যবহার করে চুক্তি লঙ্ঘন না করেই বাংলাদেশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

RELATED NEWS

Latest News