ভারতের মহাকাশ খাত দ্রুত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকারি নেতৃত্বাধীন একটি ক্ষেত্র থেকে এটি এখন উদ্ভাবননির্ভর শিল্পে পরিণত হচ্ছে। মহাকাশ প্রযুক্তি কেবল বিজ্ঞানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা জাতীয় উন্নয়ন ও সুশাসনের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সিআইআই ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন স্পেস ২০২৫-এ কেপিএমজি ইন ইন্ডিয়া ও কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) যৌথভাবে প্রকাশ করেছে একটি প্রতিবেদন। এর শিরোনাম ছিল “Propelling India into a New Era of Space and Innovation”। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক মহাকাশ অর্থনীতির ৮ শতাংশ দখল করতে চায় ভারত। এর বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ২০৩৩ সালের মধ্যে ৪৪ বিলিয়ন ডলার।
সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
বর্তমানে ভারত বৈশ্বিক মহাকাশ অর্থনীতির মাত্র ২ শতাংশ ধারণ করছে। ৮ শতাংশে পৌঁছাতে হলে নীতি, শিল্প ও শিক্ষা ক্ষেত্রের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন হবে। কেপিএমজি প্রতিবেদনে তিনটি বড় চালিকা শক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে: প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, বাজার সৃষ্টি ও অনুকূল নীতিগত পরিবেশ।
কেপিএমজির নিপুন আগরওয়াল এনডিটিভিকে বলেন, আগামী দশ বছরে বৈশ্বিক মহাকাশ অর্থনীতি দাঁড়াবে প্রায় ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার। ভারত চাইছে এর মধ্যে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলারের অংশীদার হতে।
ব্যবহারিক দিক
পৃথিবী পর্যবেক্ষণ, স্যাটেলাইট যোগাযোগ এবং ন্যাভিগেশন প্রযুক্তিকে সুশাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য ধরা হচ্ছে। এসব প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই গতি শক্তি ও আয়ুষ্মান ভারতের মতো কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে (ডিপিআই) ধরা হচ্ছে এই সংযোগের মূলভিত্তি হিসেবে। ভুবন নেক্সটজেন, ভারতনেট ও ন্যাশনাল জিওস্পেশাল ডেটা রেজিস্ট্রি (এনজিডিআর) মহাকাশভিত্তিক তথ্যকে শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করছে।
নীতি ও আইন
ভারতে এখনো আনুষ্ঠানিক মহাকাশ আইন কার্যকর হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বড় বাধা নয়। উদ্ভাবন ও নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে আগ্রহী কোম্পানিগুলো আইন ছাড়াই এগিয়ে যাচ্ছে। তবুও একটি স্পষ্ট আইনি কাঠামো ভবিষ্যতে তাদের কাজ সহজ করবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আইএসআরও-কেন্দ্রিক খাতটি এখন স্টার্টআপ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। চন্দ্রাভিযান, মানব মিশন এবং নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন গঠনের পরিকল্পনায় দেশজুড়ে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
কেপিএমজি-সিআইআই এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, টেকসই অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, নতুন অর্থায়ন মডেল এবং আলাদা স্পেস অ্যাডপশন ইউনিট গঠন প্রয়োজন। প্রতিরক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও শাসন খাত মহাকাশ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড তৈরি করবে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
ভারতের মহাকাশ খাতকে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব বাড়ানোও জরুরি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কেপিএমজির গৌরব মহিন্দ্রত্ত বলেন, “ভারত মহাকাশ যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। বহু বছরের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে এখন বৈশ্বিক নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময়।”
ভারত যখন ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ার লক্ষ্য সামনে রাখছে, তখন মহাকাশ প্রযুক্তি দেশের সুশাসন ও উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।