ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু না হওয়ার অভিযোগে দায়ের করা আবেদনে কেন্দ্র ও আসাম সরকারের কাছে জবাব চেয়েছে।
সোমবার বিচারপতি পি এস নরসিমহা ও বিচারপতি এ এস চন্দুরকরের বেঞ্চ অল আসাম মাইনরিটিজ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এএএমএসইউ এবং জমিয়ত উলমা-ই-হিন্দের পৃথক আবেদনে নোটিশ জারি করে এনআরসি কোঅর্ডিনেটরকেও পক্ষভুক্ত করেছে।
আইনজীবী ফুজাইল আহমদ আয়্যুবির আবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশের ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও তালিকাভুক্তদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি, যা নাগরিকত্ব নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু সংক্রান্ত ২০০৩ সালের বিধিমালার রুল ১৩ অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। একই বিধিমালা অনুযায়ী তালিকা থেকে বাদ পড়াদের কাছে প্রত্যাখ্যানপত্র রিজেকশন স্লিপ ইস্যু করা দরকার, যাতে তারা আপিলের সুযোগ পান।
আসামে প্রায় তিন কোটির বেশি মানুষ চূড়ান্ত এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন এবং প্রায় ১৯ লাখ ব্যক্তি প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে না পারায় বাদ পড়েন। আবেদনকারীদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিব্বল ও ইন্দিরা জয়সিং আদালতে বলেন, তালিকাভুক্ত নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২-এর অধীনে মৌলিক অধিকার। কার্ড ইস্যু না করা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪ ও ২১ লঙ্ঘন করে, যা বৈষম্যমূলক ও স্বেচ্ছাচারী।
প্রাথমিকভাবে বেঞ্চ আবেদনটি উচ্চ আদালতে অনুচ্ছেদ ২২৬ এর অধীনে করার পরামর্শ দিলেও সিব্বল জানান, ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এনআরসি চূড়ান্ত হওয়ার প্রক্রিয়া সরাসরি সুপ্রিম কোর্টই তত্ত্বাবধান করেছে। পরে আদালত কেন্দ্র, আসাম সরকার ও এনআরসি সমন্বয়ককে নোটিশ জারি করে জবাব দিতে বলে।
জমিয়তের আবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসন ইস্যুর আইনসম্মত সমাধান এনআরসি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার মাধ্যমেই সম্ভব। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর প্রক্রিয়া ঝুলে থাকায় “অনিশ্চিত নাগরিক” শ্রেণি তৈরি হয়েছে এবং সামাজিক বিভাজন ও ভয়ের পরিবেশ দীর্ঘ হয়েছে।
আবেদনকারীরা উল্লেখ করেন, এনআরসি প্রস্তুতিতে প্রায় ১৬০০ কোটি রুপি ও বিপুল বিচারিক সময় ব্যয় হয়েছে, তাই প্রক্রিয়াটিকে যৌক্তিক পরিণতিতে নিয়ে যাওয়া জরুরি।
চূড়ান্ত এনআরসি রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া ও রাজ্য সমন্বয়কের যৌথ তত্ত্বাবধানে বহু বছরের যাচাই-বাছাই, উত্তরাধিকার নথি মিলিয়ে এবং ৩ কোটির বেশি আবেদন খতিয়ে দেখে প্রকাশ করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের এই নোটিশের পর সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর জবাব পাওয়ার পর শুনানির পরবর্তী ধাপ নির্ধারিত হবে।
