আন্তর্জাতিক ডেস্ক; ঢাকা, ১লা জুন ২০২৫: ভারতের একাধিক রাজ্যে প্রবল বর্ষণ চলছে। উত্তরের পাহাড় থেকে শুরু করে দক্ষিণের সমতল পর্যন্ত বৃষ্টি মানুষের জীবনকে থামিয়ে দিয়েছে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল। মণিপুরে প্রবল বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির কারণে রাজধানী ইম্ফল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
অসমে টানা তিনদিনের ভারী বর্ষণে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ১২টি জেলায় জারি হয়েছে রেড অ্যালার্ট।
নর্থ-ইস্ট অঞ্চলে এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি এখনো পরিবর্তন হচ্ছে, ফলে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়তে পারে।
অসমের রাজধানী গुवাহাটি শহর মারাত্মক জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঝুঁকি এড়াতে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করেছেন এবং খাদ্য সহায়তা বিতরণ শুরু হয়েছে। শহরে এখন পর্যন্ত তিনটি ভূমিধসের খবর মিলেছে, তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
উত্তরে সিকিমেও একই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। উত্তর সিকিমে টানা বর্ষণে ভূমিধস হয়েছে, যার ফলে কয়েকটি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
জম্মু ও কাশ্মীরেও দক্ষিণের রামবান জেলা এবং শ্রীনগরের আশপাশে ভারী বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি এলাকাগুলোতে তাৎক্ষণিক বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি বেড়েছে।
দক্ষিণে কর্ণাটক রাজ্যে এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া প্রাক-মৌসুমী বৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত ৬৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, এই বৃষ্টিতে ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং অন্তত ১,৭০০টির মতো ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারতজুড়ে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। আগের মতো নিয়মিত বর্ষা আর থাকছে না। বরং বেশি মারাত্মক, বেশি অনিয়মিত হয়ে উঠছে এসব ঝড়-বৃষ্টি।
কেরালার কার্ন জেলাতেও টানা বৃষ্টির কারণে একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর কেরালার আটটি জেলায় আগেই রেড অ্যালার্ট জারি করেছিল।
দেশজুড়ে এখন একই চিত্র: বৃষ্টি আসছে, কিন্তু ঠিক কখন, কতটা, কতটা ধ্বংস ডেকে আনবে— সেটা আর নিশ্চিত নয়।
এখন প্রশ্ন উঠছে, শুধু বৃষ্টি থামবে কবে সেটা নয়। বরং এই নতুন বাস্তবতায়, পুরোনো অবকাঠামো কীভাবে টিকে থাকবে?
লোকজন যখন কাদা-পানিতে ভেজা ঘর থেকে ধ্বংসাবশেষ সরাচ্ছে, উদ্ধারকারী দল যখন পাহাড়ি রাস্তা ধরে দুর্গম এলাকায় যাচ্ছে, তখন প্রতিদিনই বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব।