Monday, November 10, 2025
Homeআন্তর্জাতিকঅরুণাচলে ভারতের প্রস্তাবিত মেগা ড্যাম ঘিরে আদিবাসীদের প্রতিবাদ

অরুণাচলে ভারতের প্রস্তাবিত মেগা ড্যাম ঘিরে আদিবাসীদের প্রতিবাদ

অরুণাচল প্রদেশের কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ঘেরা ফুটবল মাঠে সমবেত হয়ে ভারতের প্রস্তাবিত মেগা ড্যাম প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় আদিবাসীরা। চীনের তিব্বতে নির্মিত সম্ভাব্য রেকর্ড-ব্রেকিং ড্যামের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারত যে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে, সেটি স্থানীয়দের কাছে মৃত্যুদণ্ডের সমান মনে হচ্ছে।

রিউ গ্রামের অধিবাসী ৬৯ বছর বয়সী তাপির জামোহ বলেন, “আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব। আমরা ড্যাম তৈরি হতে দেব না।” তিনি বাঁ হাতে বিষমাখা তীর-ধনুক তুলে প্রতিবাদের অঙ্গীকার জানান।

প্রকল্পের পটভূমি

ভারত অরুণাচল প্রদেশে প্রায় ২৮০ মিটার উঁচু একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণের চিন্তাভাবনা করছে, যা চার মিলিয়ন অলিম্পিক সাইজ সুইমিং পুলের সমান পানি ধারণক্ষমতা রাখবে। এই প্রকল্প চীনের $১৬৭ বিলিয়ন ইয়াক্সিয়া হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্পের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

চীন তিব্বতে যেসব জলবিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করছে তা বিশ্বের সবচেয়ে বড় থ্রি গর্জেস ড্যামের চেয়েও তিনগুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। তবে চীনের দাবি, এসব প্রকল্প ডাউনস্ট্রিমের কোনো ক্ষতি করবে না।

ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, চীন এ ধরনের বাঁধকে জল-অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে নিম্নপ্রবাহে কৃত্রিম খরা বা আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি করতে পারে।

স্থানীয়দের ক্ষোভ ও আশঙ্কা

আদি জনগোষ্ঠী নিজেদের ‘সিয়াং নদীর সন্তান’ বলে পরিচয় দেয়। তারা বিশ্বাস করে, ড্যাম হলে তাদের বসতি, সংস্কৃতি ও পরিচয় বিলীন হয়ে যাবে। “নদী আটকালে আমরাও শেষ,” বলেন জামোহ।

ভাষ্য অনুযায়ী, ভারতের প্রস্তাবিত বাঁধটি ১১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রাখলেও এর মূল লক্ষ্য হবে পানি নিরাপত্তা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ। ন্যাশনাল হাইড্রোপাওয়ার করপোরেশনের (এনএইচপিসি) একজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, এটি মূলত চীনের বাঁধের সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব ঠেকানোর জন্য।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, তারা প্রকল্পের বিস্তারিত জানতে চাইলেও তা দেওয়া হয়নি। বরং এলাকা এখন আধাসামরিক বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে। মে মাসে ক্ষুব্ধ আদিবাসীরা এনএইচপিসির জরিপকাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

বিতর্কিত সিদ্ধান্ত

অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু বলেছেন, চীনের বাঁধের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই ড্যাম একটি ‘জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা’। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে পানি ব্যবস্থাপনা চুক্তি করা গেলে তা আরও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দিতে পারে।

ভারতের নির্মাণ পরিকল্পনা সত্ত্বেও ভূমিকম্পপ্রবণ অরুণাচলে বড় বাঁধ তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ বলে সতর্ক করেছেন আইআইটি গুয়াহাটির গবেষকরা।

প্রতিবাদের ডাক

সিয়াং ইন্ডিজেনাস ফারমার্স ফোরামের (এসআইএফএফ) ভানু তাতাক অভিযোগ করেন, “আমরা প্রকল্পের নকশা জানতে চাই, কিন্তু আমাদের সামরিকীকরণ করা হচ্ছে। আমাদের চরমপন্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে।”

ইয়িংকিয়ং শহরের বাসিন্দা লিকেং লিবাং বলেন, “এই ড্যাম হলে আদি সম্প্রদায় মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।”

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, তাদের প্রতিবাদ চলবে। “যদি ড্যাম হয়, আশা করি আমি তার আগেই মারা যাব,” তীর-ধনুক হাতে বলেন জামোহ।

এই মেগা ড্যাম প্রকল্প নিয়ে ভারত ও চীনের জলবিরোধ আবারও নতুন মাত্রা পেয়েছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার স্থানীয়দের উদ্বেগ কতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে এবং প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়ায়।

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • ভারত

RELATED NEWS

Latest News