ডেইলি প্রতিদিনের বাণী রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৫, ২০:৫৮
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কাশ্মীর ইস্যুতে সাম্প্রতিক হামলা ও যুদ্ধ উত্তেজনার রেশ কাটতে না কাটতেই ভারতের ভেতরে দমন-পীড়নের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে যে কেউ কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার কিংবা কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে মতপ্রকাশ করছেন, তাকে পড়তে হচ্ছে প্রশাসনিক হয়রানি, মামলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে।
আলজাজিরা ও এনডিটিভি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত কয়েক দিনে দেশটিতে মতপ্রকাশের কারণে একাধিক শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
গত রোববার আলী খান মাহমুদাবাদ নামের এক শিক্ষাবিদকে গ্রেফতার করা হয় শুধুমাত্র সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তোলার কারণে। একই সময়ে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের ‘হাম দেখেঙ্গে’ গান গাওয়ার দায়ে একদল সাংস্কৃতিক কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের হয় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা।
কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক ও অধ্যাপক নীতাশা কৌলের ওভারসিজ সিটিজেনশিপ অব ইন্ডিয়া (ওসিআই) বাতিল করে তাকে ‘মাতৃভূমি থেকে নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। সামাজিক মাধ্যমে নীতাশা নিজেই সরকারপ্রদত্ত চিঠি প্রকাশ করে বলেন, “মোদি সরকারের সংখ্যালঘু ও গণতন্ত্রবিরোধী নীতির সমালোচনার শাস্তি হিসেবেই আমার ওসিআই বাতিল করা হয়েছে।”
তিনি কর্নাটক রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণে একটি সম্মেলনে অংশ নিতে ভারতে গেলে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো হয় এবং সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ করেন।
এদিকে কাশ্মীরে আতঙ্ক এতটাই প্রকট যে, তরুণরা এখন তাদের বাহু থেকে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বার্তা সম্বলিত ট্যাটু মুছে ফেলছেন। ট্যাটু একসময় ছিল প্রতিবাদের প্রতীক, এখন তা হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ঝুঁকি।
বারামুল্লার ইরফান ইয়াকুব, যিনি একসময় বিদ্রোহীর নামের ট্যাটু করেছিলেন, বলেন, “পরিবার, চাকরি আর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এখন সেটা মুছে ফেলছি।”
শোপিয়ানের বাসিন্দা রইস ওয়ানিও একই কারণে তার ট্যাটু মুছে ফেলেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে যে প্রশ্ন উঠছে, সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপগুলো তা আরও গভীর করেছে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে বুদ্ধিজীবী সমাজ, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ভয় ও আতঙ্ক।