Friday, July 25, 2025
Homeআন্তর্জাতিকজলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যর্থতা 'আন্তর্জাতিক অন্যায়', বলল বিশ্ব আদালত

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যর্থতা ‘আন্তর্জাতিক অন্যায়’, বলল বিশ্ব আদালত

আইসিজের অভিমত অনুযায়ী, দায়িত্বে অবহেলা করলে রাষ্ট্রকে ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় রাষ্ট্রগুলোর ব্যর্থতাকে ‘আন্তর্জাতিকভাবে অন্যায় কাজ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালত, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। বুধবার দেওয়া এক ঐতিহাসিক অভিমতে আদালত জানায়, এই ধরনের দায়িত্বহীনতা ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করার পথ খুলে দিতে পারে।

জাতিসংঘের অনুরোধে হেগে অবস্থিত এই আদালত বিশ্বের নানা প্রান্তের রাষ্ট্র ও সংগঠনের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া হাজার হাজার পৃষ্ঠার তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে রায় দেয়।

আইসিজে প্রেসিডেন্ট ইউজি ইওয়াসাওয়া বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন একটি জরুরি ও অস্তিত্ববাদী হুমকি। রাষ্ট্রগুলো যখন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তখন তা আন্তর্জাতিকভাবে একটি অন্যায় কাজ হয়ে দাঁড়ায়।”

আদালতের ভাষ্য অনুযায়ী, “যেসব রাষ্ট্র জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় দায়বদ্ধতা এড়িয়ে গেছে, তাদের বিরুদ্ধেই এই আইনি ব্যাখ্যা প্রযোজ্য হবে। প্রমাণিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, যা হতে পারে পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ বা প্রতিকারমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে।”

অভিমতে আরও বলা হয়, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জলবায়ুকে রক্ষা করা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্ব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভিমত জলবায়ু বিচারব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে এবং বিভিন্ন দেশের আদালতে জলবায়ু মামলার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।

এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ছয় বছর আগে, প্যাসিফিক অঞ্চলের জলবায়ু হুমকির মুখে থাকা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে। ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্র ভানুয়াটু এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক পরিসরে এগিয়ে নিয়ে যায়।

ভানুয়াটুর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী রালফ রেগেনভানু বলেন, “আমরা ৩০ বছর ধরে লড়াই করছি। এটি দৃষ্টিভঙ্গির বড় পরিবর্তন ঘটাবে বলে বিশ্বাস করি।”

গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বিশাল এক শুনানিতে শতাধিক রাষ্ট্র ও সংস্থা তাদের বক্তব্য পেশ করে। ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো যেখানে জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে, সেখানে বৃহৎ অর্থনীতির রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু দায় নিয়ে নতুন আইনি পদক্ষেপের বিরোধিতা করে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ বড় রাষ্ট্রগুলো দাবি করে, জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক (UNFCCC) যথেষ্ট আইনি কাঠামো দিয়েছে। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট রাষ্ট্রগুলো বলছে, এই কাঠামো পর্যাপ্ত নয় এবং আইসিজের অভিমত আরও বিস্তৃত হওয়া দরকার।

তারা চায়, যারা অতীতে দূষণ করেছে তাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হোক। পাশাপাশি, জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের সময়সীমা নির্ধারণ, অতীতের দায় স্বীকার এবং ন্যায্য ক্ষতিপূরণের রূপরেখাও দেওয়া হোক।

বিশ্বজুড়ে যখন জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় অগ্রগতি ধীরগতির, তখন এই অভিমত জলবায়ু সুবিচারের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

RELATED NEWS

Latest News