Sunday, August 3, 2025
Homeজাতীয়আন্তর্জাতিক আদালতের জলবায়ু অর্থায়ন সংক্রান্ত মতামত মরাল বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির দাবি

আন্তর্জাতিক আদালতের জলবায়ু অর্থায়ন সংক্রান্ত মতামত মরাল বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির দাবি

আইসিজের পরামর্শ আইনি বাধ্যবাধক নয়, তবে রাষ্ট্রগুলোর প্রতি জলবায়ু দায়িত্ব পালনের নৈতিক চাপ তৈরি করেছে

পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজ) সম্প্রতি যে জলবায়ু অর্থায়ন সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়েছে, তা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক না হলেও রাষ্ট্রগুলোর প্রতি একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করেছে।

শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত রাউন্ডটেবিল আলোচনায় তিনি এই কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আইসিজের মতামত রাষ্ট্রগুলোর ওপর জলবায়ু দায়িত্ব পালনের নৈতিক চাপ তৈরি করেছে। নাগরিক সমাজের চাপের সঙ্গে মিলিয়ে এটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য করতে পারে। তিনি জানান, আদালত ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সীমার পুনর্বিচার করেছে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে দ্রুত স্থানান্তরের জরুরি আহ্বান জানিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, বিশেষ করে তরুণরা যারা ইতিমধ্যেই পরিবেশ আন্দোলনে নিয়োজিত, তাদের জন্য এই নিয়ম অগ্রাহ্য করা যাবে না।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরহিনা আহমেদ বলেন, আইসিজের মতামত কেবল আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা নিয়ে নয়, এটি অভ্যন্তরীণ জলবায়ু ন্যায়বিচারের গুরুত্ব তুলে ধরে। তিনি জানান, সকল মন্ত্রণালয়কে তাদের কাজের মধ্যে জলবায়ু এবং ঝুঁকিপূর্ণ দিকগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, মতামতটি সকলের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে যাতে কেউ পেছনে না পড়ে। তিনি এনজিও ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত জলবায়ু ভবিষ্যত গড়তে আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ আইনজীবী মো. হাফিজুল ইসলাম খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আইসিজের মতামত স্পষ্ট করেছে যে জলবায়ু ব্যবস্থা গ্রহণ এখন আর ঐচ্ছিক নয়, এটি একটি বাধ্যতামূলক আইনি দায়িত্ব।

বাংলাদেশের আইসিজে আইনগত পরামর্শদাতা প্রফেসর পয়াম আখাবান এই মতামতকে জলবায়ু আলোচনায় পরিবর্তনের একটি মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আইনের ব্যবহার বাড়িয়ে জলবায়ু অর্থায়ন, ক্ষতিপূরণ ও দায়িত্ববোধের দাবি তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ম্যারি-ক্লেয়ার করডোনিয়ার সেগার বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেন। এই অংশীদারিত্বের মধ্যে অনলাইন কোর্সের জন্য স্কলারশিপ রয়েছে।

তরুণ জলবায়ু কর্মী সোহানুর রহমান বলেন, আইসিজের পরামর্শ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে শক্তিশালী জলবায়ু আইন প্রণয়ন করতে হবে যাতে ন্যায্যতা নিশ্চিত হয়, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী রক্ষা পায় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।

২৩ জুলাই হেগে আন্তর্জাতিক আদালত এই ঐতিহাসিক মতামত প্রকাশ করে, যার মধ্যে জলবায়ু অর্থায়ন, ক্ষতিপূরণ এবং অভিযোজন সংক্রান্ত বিষয়গুলো আলোচিত হয়।

আদালত সতর্ক করে দিয়েছে যে, জলবায়ুর ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ না দিলে দায়িত্বশীল রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ হতে পারে।

এই সিদ্ধান্তের আগে ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে আইসিজের মতামত চেয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছিল।

বাংলাদেশ ছিল সেই ১৮টি মূল দেশের মধ্যে যারা এই উদ্যোগ নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং আইনি প্রশ্নাবলী প্রণয়নে সহায়তা করেছিল।

RELATED NEWS

Latest News