ঈচ্ছামতি নদী পুনরুজ্জীবনের উদ্দেশ্যে গৃহীত বৃহৎ খনন প্রকল্পটি পাবনায় স্থবির হয়ে পড়েছে। নানা আইনি জটিলতা ও ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে এই প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।
২০২৩ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। ২০২৭ সাল পর্যন্ত চলার কথা এই প্রকল্পের। এর আওতায় নদী খননের পাশাপাশি ২৩টি নতুন সেতু নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন, নদীঘাট নির্মাণ, হেঁটে চলার পথ এবং সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এই প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত।
ডেইলি সান-এর এক প্রতিবেদক মাঠপর্যায়ে গিয়ে জানান, পাবনার গ্রামীণ অঞ্চলে যেমন আতাইকুলা, গয়েশপুর ও মালঞ্চি ইউনিয়নে খনন কাজ বেশ গতিশীল। আগে যেখানে নদী আবর্জনায় ভরতি ছিল, এখন সেখানে পরিষ্কার পানির প্রবাহ দেখা যাচ্ছে।
তবে শহরের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশে, বিশেষ করে লাইব্রেরি বাজার থেকে পুরাতন ব্রিজ পর্যন্ত কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (WDB) জানায়, একটি প্রভাবশালী ভূমি-দখলকারী গোষ্ঠী এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের বিরুদ্ধে ৯৮টি মামলা হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালের মে মাসেই ১০টি নতুন মামলা দায়ের হয়।
ঈচ্ছামতি নদী রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি এস এম মাহবুব বলেন, “ভূমি-দখলদারদের কারণে বারবার প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সরকারি অর্থ অপচয় হচ্ছে, সেই সঙ্গে নদী বাঁচানোর স্বপ্নও হুমকির মুখে।”
পাবনা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, “অনেক মামলাই জাল কাগজের ভিত্তিতে দায়ের করা হয়েছে, যার অনেকগুলো উচ্চ আদালত থেকে খারিজ হয়েছে। সম্প্রতি দায়ের হওয়া ১০টি মামলা প্রকল্পকে বাধাগ্রস্ত করার সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা।”
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা আদালতের বিষয় উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আইন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়ে তারা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করেছে।
প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, “যেসব এলাকায় মামলা নেই, সেখানে কাজ চলছে। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় করা হচ্ছে।”
এই প্রকল্পটি স্বাধীনতার পর বহুবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যকর হয়নি। এবারও আইনি বাধা অতিক্রম না করলে, ঈচ্ছামতির পুনর্জন্মের আশা অন্ধকারেই রয়ে যেতে পারে।