২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। এ বছর গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৭ দশমিক ১২ শতাংশ, যা জাতীয় গড়ের চেয়ে কম। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার সর্বোচ্চ ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, যা সাধারণ বোর্ডগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার সর্বনিম্ন ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
২০০৪ সালে সর্বশেষ সবচেয়ে কম পাসের হার ছিল ৪৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার ইহসানুল কবির বলেন, “কোনো বিশেষ নির্দেশনা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে। ফলাফল বাস্তবচিত্র তুলে ধরেছে।”
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে শিক্ষার প্রকৃত মান থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিলাম। এই ফলাফল বাস্তবতার প্রতিফলন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, “এবারের ফল বাস্তবসম্মত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চ জিপিএ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্বল পারফরম্যান্স করেছে।”
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, ৩৬ বছরে এটি মাত্র তৃতীয়বার যখন জাতীয় পাসের হার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে নেমে এসেছে।
২০২২ সালে পাসের হার ছিল সর্বোচ্চ ৮৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।
মাদ্রাসা বোর্ডে সেরা, কুমিল্লা বোর্ডে সর্বনিম্ন
আলিম পরীক্ষায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।
ঢাকা বোর্ডে ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, বরিশালে ৬২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, দিনাজপুরে ৫৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সিলেটে ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যশোরে ৫০ দশমিক ২০ শতাংশ এবং কুমিল্লায় সর্বনিম্ন ৪৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক খোন্দকার মোহাম্মদ সাদেকুর রহমান জানান, “পরীক্ষাকেন্দ্র পরিবর্তনের কারণে ফলাফলে প্রভাব পড়তে পারে।”
জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কমেছে
গত বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৬ হাজার ৮১৪ জন কমেছে। এ বছর মোট ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ঢাকা বোর্ডে সর্বাধিক ২৬ হাজার ৬৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। রাজশাহী, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, যশোর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বোর্ডে সংখ্যাটি ক্রমান্বয়ে কম।
শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান কমেছে, শূন্য পাস বেড়েছে
এ বছর ৩৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শতভাগ পাস করেছে, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। অপরদিকে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে ২০২ হয়েছে।
ইংরেজি, আইসিটি ও হিসাববিজ্ঞানে দুর্বলতা
শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে দুর্বল পারফরম্যান্স করেছে ইংরেজি, আইসিটি ও হিসাববিজ্ঞানে। যশোর বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ, দিনাজপুরে হিসাববিজ্ঞানে ৫৮ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে আইসিটিতে ৭২ দশমিক ৭২ শতাংশ।
বিভাগভিত্তিক ফলাফল
মানবিক বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে কম, যেখানে ৫১ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং বাণিজ্যে ৫৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
ক্যাডেট কলেজে শতভাগ সাফল্য, মেয়েরা এগিয়ে
বিদেশি কেন্দ্রগুলোতে পাসের হার ৯৫ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং ১২টি ক্যাডেট কলেজে শতভাগ পাসের পাশাপাশি ৫৮৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
মেয়েদের পাসের হার ৬২ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা ছেলেদের ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশের তুলনায় বেশি।
মোট ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন পরীক্ষার্থী এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেয়।