ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের রেড সাগরে দুটি বাণিজ্যিক জাহাজে সাম্প্রতিক হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW)।
বুধবার সংস্থাটি জানায়, ‘ম্যাজিক সিস’ ও ‘ইটারনিটি সি’ নামক দুটি কার্গো জাহাজে হুথিদের চালানো হামলা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইনের লঙ্ঘন। হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন এবং ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
হুথি বিদ্রোহীরা দাবি করেছে, তারা কিছু নাবিককে উদ্ধার করেছে, তবে তাদের অবস্থান এখনও নিশ্চিত নয়।
নিউইয়র্কভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা কোনো প্রমাণ পাইনি যে জাহাজ দুটি সামরিক লক্ষ্যবস্তু ছিল। এগুলো পরিষ্কারভাবে বেসামরিক জাহাজ এবং এগুলোর ওপর হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল।”
HRW আরও জানায়, “উদ্ধারপ্রাপ্ত নাবিকদের আটকে রাখা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ।”
হুথি নেতা আবদেল মালেক আল-হুথি দাবি করেছেন, হামলার লক্ষ্যবস্তু দুটি জাহাজ ইসরায়েলের বাণিজ্যিক স্বার্থর সঙ্গে জড়িত। তবে HRW জানায়, জাহাজগুলোর কোনো ইসরায়েল সংযোগ ছিল না।
‘ম্যাজিক সিস’ চীন থেকে তুরস্কে যাচ্ছিল এবং এতে ছিল সার ও স্টিল। অন্যদিকে, ‘ইটারনিটি সি’ সোমালিয়া থেকে সৌদি আরবে যাচ্ছিল এবং জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ত্রাণ সরবরাহ করেছিল।
HRW-এর ইয়েমেন ও বাহরাইন গবেষক নিখু জাফারনিয়া বলেন, “হুথিরা ইসরায়েলের অপরাধের কথা বলে এই অবৈধ হামলা যৌক্তিক করার চেষ্টা করছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। হুথিদের উচিত এসব হামলা বন্ধ করা এবং আটক নাবিকদের দ্রুত মুক্তি দেওয়া।”
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হুথিরা রেড সাগর ও গালফ অব এডেনে ১০০টিরও বেশি জাহাজে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে পশ্চিমা নৌবাহিনী পরিচালিত জয়েন্ট মেরিটাইম ইনফরমেশন সেন্টার।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও জানিয়েছে, হামলায় ডুবে যাওয়া জাহাজ দুটি থেকে তেলের বিশাল দাগ ছড়িয়ে পড়ছে, যা ইরিত্রিয়ার উপকূলের কাছে সংরক্ষিত প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যে পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।
ডাচ শান্তি সংস্থা PAX-এর উইম জুউইনেনবার্গ স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং জানান, ডুবে যাওয়া স্থান থেকে তেল সমুদ্র তীরবর্তী মৎস্যজীবী গ্রামেও গড়াচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো হুথিদের এসব কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছে।