১৯৫৩ সালে ‘রোমান হলিডে’ সিনেমাটি অস্কার জিতেছিল সেরা চিত্রনাট্যের জন্য। পুরস্কার নিয়েছিলেন ইয়ান ম্যাকলেলান হান্টার, যদিও প্রকৃত লেখক ডাল্টন ট্রাম্বো ছিলেন কালো তালিকাভুক্ত। অনেক বছর পর তার নাম যুক্ত হয় সেই চিত্রনাট্যে। এটি ছিল না একক ঘটনা।
১৯৩৯ সালের ‘দ্য উইজার্ড অব অজ’ সিনেমায় পরিচালক হিসেবে নাম ছিল ভিক্টর ফ্লেমিংয়ের। তবে সিনেমাটির টোন ও ভিজ্যুয়াল গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল জর্জ কুকর ও কিং ভিদরের, যাদের নাম কোথাও ছিল না। এমনকি ১৯৮২ সালের ‘পোলটারগাইস্ট’ সিনেমাও নির্মিত হয় তোবে হুপারের নামে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায় প্রকৃত নির্দেশনা দিয়েছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ।
এভাবে ‘অদৃশ্য শ্রমিক’ দিয়ে হলিউড চলেছে বহু যুগ। পর্দায় থাকে একজনের নাম, কিন্তু পেছনে কাজ করেন অগণিত মানুষ—লেখক, সম্পাদক, ডিজাইনার, পরামর্শক—যাদের নাম থাকে না স্ক্রলে। কারণ, একক প্রতিভার মিথটাই বিক্রি হয় সবচেয়ে ভালো।
এই মিথ এখন নতুন এক চরিত্র পেয়েছে—এআই।
নতুন এআই প্রযুক্তি অনেককে আনন্দ দিচ্ছে দ্রুত কাজের সুবিধার কারণে। কেউ কেউ একে দেখছেন নিখুঁত সহকারীর মতো। মিনিটে তিনটি গল্পের সারাংশ দিতে পারে। বিট শিটও তৈরি করে দিতে পারে সকালে নাস্তার আগেই। অনেক স্টুডিও, ক্লায়েন্ট, প্রযোজক এখন লেখকদের হাতে দিচ্ছেন এআই দ্বারা তৈরি খসড়া—কোনো স্বীকৃতি ছাড়া, কোনো নাম ছাড়াই।
একজন জনপ্রিয় শোরানারকে সম্প্রতি অনুরোধ করা হয় ChatGPT তৈরি করা একটি পাইলট স্ক্রিপ্ট শুধুমাত্র “পলিশ” করে দিতে। আবার এক ডিজাইনার বলছিলেন, তিনি যে সায়েন্স ফিকশন সিরিজের ভিজ্যুয়াল বানাচ্ছেন, সেটির মূল লুকবুকটি বানানো হয়েছে Midjourney দিয়ে।
এই কৌশল নতুন নয়। ম্যাকার্থি যুগেও কালো তালিকাভুক্ত লেখকদের স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করতো স্টুডিওগুলো, কিন্তু অন্য নামে। তখন রাজনৈতিক আদর্শ ছিল অদৃশ্যতার পেছনের কারণ। এখন সেটা কেবল সুবিধার প্রশ্ন।
প্রযুক্তি ব্যবহারের এই দৃষ্টিভঙ্গি কেবল মানুষের শ্রমকেই অদৃশ্য করে না, বরং ইতিহাসকেও মুছে দেয়। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো এখন ক্রেডিট দেয় কম। শুরুর শিরোনাম ছোট করে, শেষের নাম স্ক্রল হঠায়। দর্শক জানতেও পারে না, কে কাজ করেছিল।
ক্রিস্টোফার নোলান তার ‘ওপেনহেইমার’ সিনেমা বানিয়েছেন এআই ছাড়া। এটি হয়তো একগুঁয়েমি, আবার হয়তো স্মরণ করিয়ে দেয়—আসল সৃষ্টিশীলতা এখনও মানুষের হাতে।
শিল্পে প্রযুক্তি থাকবে, কিন্তু সেটি যদি সহযোগিতা নয় বরং মুছে ফেলার মাধ্যম হয়, তাহলে তা উন্নয়ন নয়, বিলুপ্তির সূচনা।
স্টুডিওগুলো জানে কিভাবে একজন মানুষের কণ্ঠে পুরো দলের কৃতিত্ব ঢেকে দেওয়া যায়। এখন এআই সেই প্রক্রিয়াকে করে তুলেছে আরও সস্তা, নিরব, আর দ্রুত।
তাই সিনেমা দেখে হলে থাকুন শেষ পর্যন্ত। স্ক্রল শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কারণ, যখন নাম বন্ধ হয়ে যাবে, তখন নীরবতা আর উদ্ভাবনের বার্তা দেবে না। বরং জানিয়ে দেবে—মানবিকতা হারিয়ে গেছে।