Thursday, July 10, 2025
Homeজাতীয়ঢাকায় ‘হেডশট ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতা’ শীর্ষক সপ্রাণের আলোচনায় ক্ষোভ ও বিচার দাবির...

ঢাকায় ‘হেডশট ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতা’ শীর্ষক সপ্রাণের আলোচনায় ক্ষোভ ও বিচার দাবির জোরাল প্রতিধ্বনি

জুলাই আন্দোলনে হেডশটের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের দমন, প্যানেল আলোচনায় রাষ্ট্রের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা

রাজধানী ঢাকায় ‘হেডশটের অ্যানাটমি: রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও প্রতিবাদ দমনের নির্মম বাস্তবতা’ শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ও অধিকারভিত্তিক চিন্তাশীল সংস্থা সপ্রাণের যৌথ আয়োজনে এই আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, আইনজ্ঞ ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।

আলোচনায় বক্তারা অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্ট মাসে গণআন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাষ্ট্রসমর্থিত বাহিনী সংগঠিতভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর হেডশট চালিয়েছিল। এতে বহু তরুণ নিহত হন এবং অনেক পরিবার চরম দুর্দশায় পড়ে।

আলোচনার শুরুতে সপ্রাণ গবেষক নুসরাত জাহান নিসু সংস্থাটির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ব্যাখ্যা করেন। এরপর দেখানো হয় একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও, যেখানে আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হেডশটের ফুটেজ প্রদর্শিত হয়।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সপ্রাণ গবেষক জেবা সাজিদা সারাফ। তিনি বলেন, “নির্বাচিত স্বৈরাচার সরকার দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতাকে রাজনৈতিক দমনযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।” এ বিষয়ে সপ্রাণের গবেষণায় উল্লেখিত নীতিগত সুপারিশও তুলে ধরেন তিনি।

শহীদ মো. আতিকুর রহমানের ভাই মো. সোলায়মান টপু আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীর কাজলায় পুলিশের নির্মম হামলার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, “পাঁচ বছরের শিশু থেকে পঞ্চাশ বছরের বৃদ্ধ—সবাই একসাথে দাঁড়িয়েছিল প্রতিবাদে। আজ আমাদের শুধু বিচার চাই।”

শহীদ ওমরের ভাই সিরাজুল ইসলাম বলেন, “মা আজও কাঁদেন। তিনি বলতেন, ওমর যেন বড় না হয়। অথচ আজ সে নেই।” তিনি জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বখতিয়ার আহমেদ বলেন, “আমি ব্যথিত, তবে বিস্মিত হইনি। গত ১৫ বছর ধরে তারা এই হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বন্দুকের নলই এখন শক্তির উৎস। আর সেটাই স্বৈরাচারের নেশা।”

তিনি সংবিধানে উপনিবেশিক ধারার উপস্থিতি এবং অতীতে ঘটে যাওয়া বিচারবহির্ভূত হত্যার বর্ণনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা চোখের সামনে একটি সরকারকে খুনি হতে দেখেছি, অথচ চুপ থেকেছি।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, “মাথায় গুলি মানেই শুধু শরীরকে হত্যা নয়—এই রাষ্ট্র চিন্তা ও মতাদর্শকেই খুন করতে চায়।”

তিনি বলেন, শ্রেণি বৈষম্য এবং নিও-কলোনিয়াল মতাদর্শ ব্যবহার করে বিরোধীদের ‘রাজাকার’ ও ‘বিরোধী শক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করে দমন করা হয়েছে।

সাংবাদিক জিনা তাসরিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্র কেনা ও ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি জানান। তিনি বলেন, “জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র যেন জনগণের ওপরই না চাপে, সে ব্যবস্থা দরকার।”

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সদমান রিজওয়ান অপূর্ব আইনি প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণভাবে সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন উপেক্ষা করেছে। পুলিশ প্রশাসনের কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে, তারা কোনো ছাত্র সংগঠনের কর্মী।”

আলোচনার শেষাংশে সপ্রাণের গবেষণা পরিচালক মো. জারিফ রহমান বলেন, “আমাদের কাজ শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিভুক্তিকরণ নয়, বরং রাষ্ট্র যেভাবে এই সহিংসতাকে জায়েজ করতে চায়, সেসব বয়ান উন্মোচন করা।”

এই আলোচনা সভা প্যানেল ও অংশগ্রহণকারীদের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জাতিকে একটি প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে—রাষ্ট্র কি আর মানুষের জন্য, নাকি কেবল রাষ্ট্রের জন্যই রাষ্ট্র।

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • ঢাকা

RELATED NEWS

Latest News