বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চল দ্রুত দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। মৌসুমি সৌন্দর্য, অনন্য পরিবেশব্যবস্থা এবং স্থানীয় সংস্কৃতি দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করছে।
তাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢল ও মেঘের প্রতিচ্ছবি এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে। ভ্রমণকারীরা শিমুল বাগান, নীলাদ্রি লেক, বারিক টিলা ও জাদুকাটা নদী ঘুরে দেখেন। পর্যটকদের জন্য বিলাসবহুল হাউসবোট চালু রয়েছে, যেখানে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
তাঙ্গুয়ার হাওর হাউসবোট মালিক সমিতির সভাপতি আরাফাত আকন্দ জানান, আসন্ন দুর্গাপূজা ছুটিতে প্রায় সব হাউসবোটই বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকের চাপ সামলাতে অনেকেই প্যাকেজ চালু করেছে। পরিবেশগত কারণে ১৯৯৯ সালে হাওরটি ‘ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া’ ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালে আন্তর্জাতিকভাবে রামসার সাইটের স্বীকৃতি পায়।
অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওরও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নিকলি বাঁধ শুধু ভাঙন রোধেই নয়, এখন পর্যটনেরও বড় আকর্ষণ। বর্ষা মৌসুমে হাজারো মানুষ নৌকা ভ্রমণে যান, স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়।
স্থানীয় নৌকার মাঝি মানিক মিয়া বলেন, “বর্ষায় পানি আসলেই আমাদের মৌসুম শুরু হয়। তখন পর্যটক আসে, আর আমরা নৌকা চালিয়ে ভালো আয় করি।”
ঢাকা থেকে আসা ভ্রমণকারী শামসুল হুদা বলেন, “প্রকৃতির সৌন্দর্য অসাধারণ, তবে নৌকা ভাড়া অনেক বেশি। নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।” স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিকলি ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার আল মামুন জানান, “২৪ জন কর্মী, দুটি ফায়ার শিপ ও দুটি স্পিডবোট সবসময় প্রস্তুত। তবে পর্যটকদের সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ করা হচ্ছে।”
এদিকে কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলাকে যুক্ত করা অল-ওয়েদার সড়কও নতুন পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় রাস্তার দুই পাশে জলের বিস্তীর্ণ সৌন্দর্য ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করছে।
পর্যটন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাওরাঞ্চলের পর্যটন দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। তবে এজন্য পরিবেশ সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং ভ্রমণ ব্যবস্থাপনায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।