বাংলাদেশ জাতীয় দলে আবারও আলো ছড়ালেন হামজা চৌধুরী। নেপালের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে তার অসাধারণ পারফরম্যান্স দুই গোল এনে দিলেও ম্যাচ শেষ হয়েছে ২–২ ড্রতে। এ ড্র দেখিয়ে দিল একটি কঠিন সত্য। একাই কতদূর টেনে নিতে পারবেন হামজা?
আক্রমণ সাজানো থেকে রক্ষণ ঠেকানো, ফাঁক খুঁজে থ্রু বল দেওয়া থেকে বক্সে দৌড়ে উঠে ফিনিশিং — সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিলেন ইংলিশ ক্লাব লেস্টার সিটির এই মিডফিল্ডার। সাধারণত রক্ষণাত্মক ভূমিকায় খেললেও বৃহস্পতিবার তাকে দেখা গেছে পুরো মাঠে নেতৃত্ব দিতে। দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ার পর নিজেই সামনে উঠে পরপর দুই গোল করেন তিনি। তার একটি গোল ছিল চমৎকার বাইসাইকেল কিক।
প্রায় ৮০ মিনিট তিনি ছিলেন দলের চালিকাশক্তি। মাঝমাঠ গুছিয়ে দেওয়া, রক্ষণ সামলানো, সামনে উঠে গোল করা — সবকিছুই করেছেন তিনি। কিন্তু সমস্যা হলো, তার আশেপাশের খেলোয়াড়রা বারবার তাল মেলাতে ব্যর্থ হন। নেপালের বক্সে জায়গা তৈরি করে বল চাইলে সতীর্থরা তা উপেক্ষা করেন এবং দূর থেকে তাড়াহুড়া করে শট নেন। পরে শমিত শোম মাঠে নামার পর কিছুটা সমন্বয় দেখা দেয়। শমিতের গতি ও পজিশনিং হামজাকে কিছুটা সহায়তা করে।
হামজা আহত হয়ে মাঠ ছাড়ার পর খেলার নিয়ন্ত্রণ হারায় বাংলাদেশ। নেপাল শেষ মুহূর্তে গোল করে সমতায় ফেরে। অক্টোবর মাসে হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ হারানোর মতোই একই চিত্র দেখা যায়। ম্যাচ শেষে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা বলেন, এমন পরিস্থিতি সামলাতে দল নিয়মিত অনুশীলন করলেও মাঠে সেই প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না।
নেপালের ফুটবলে প্রায় এক হাজার দিন ধরে লিগ নেই, নেই ঠিকঠাক স্টেডিয়াম, নেই ঘরোয়া কাঠামো। অনেক খেলোয়াড় নিয়মিত খাবার জোগাড় করতে পর্যন্ত সংগ্রাম করেন। এর মধ্যেও তাদের মাঠে দেখা গেল শৃঙ্খলা, দৃঢ়তা ও লড়াইয়ের মানসিকতা। দলের আট খেলোয়াড় বাংলাদেশের লিগে খেলেন। যাদের মধ্যে অনেকে সম্প্রতি নিজেদের দেশে ফুটবল ফেরানোর দাবিতে আন্দোলনে ছিলেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ দল পাচ্ছে নিয়মিত লিগ, উন্নত প্রস্তুতি, দীর্ঘ ক্যাম্প ও ভালো অবকাঠামো। তবুও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছেন না অনেক খেলোয়াড়। ফলে দল নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে দুই বা তিনজন খেলোয়াড়ের ওপর, যারা দেশের বাইরে থেকে উড়ে এসে দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন।
হামজার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ, কিন্তু ড্র দেখিয়ে দিল বাংলাদেশ এখনো একক প্রতিভার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল। দলে আরও খেলোয়াড় দরকার যারা রক্ষণে সহায়তা করবে, রূপান্তর গতি বাড়াবে এবং আক্রমণভাগে নিয়মিত অবদান রাখবে। তা না হলে দল কখনো উজ্জ্বল মুহূর্ত দেখাবে, আবার কখনো হতাশ করবে।
১৮ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের আগে এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি ম্যাচ। মার্চে অভিষেকের পর ছয় ম্যাচে চার গোল করেছেন হামজা। একজন রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারের জন্য এটি বিরল অর্জন।
তবুও প্রশ্ন রয়ে যায়। যদি একা লড়াই করতে হয়, বাংলাদেশ কতদূর যেতে পারবে?
