নেপাল ও ভারতের বিপক্ষে আসন্ন ম্যাচগুলোকে সামনে রেখে চলা বাংলাদেশের অনুশীলন ক্যাম্পে আবারও প্রাণ ফিরে এসেছে। আর সেই প্রাণের নাম হামজা চৌধুরী।
লেস্টার সিটির এই মিডফিল্ডার মাঠে পা রাখার মুহূর্তেই যেন বদলে গেল পুরো পরিবেশ—হাসি, আলাপ, উচ্ছ্বাসে ভরে উঠল দলীয় আবহ। মঙ্গলবার বিকেলে দলের অনুশীলন মাঠে ফিরলেন তিনি, আর তার সঙ্গেই ফিরল সেই অনুপস্থিত স্পার্ক।
তবে ফিরতে গিয়েও ঘটল একের পর এক নাটকীয়তা। সোমবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও দেরিতে বিমানবন্দরে পৌঁছানোয় নির্ধারিত ফ্লাইট মিস করেন হামজা। পরে নিজ খরচে নতুন টিকিট কেটে সন্ধ্যা ৫টার দিকে ঢাকায় পৌঁছান।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়—ঢাকার কুখ্যাত যানজটও তাকে ছাড়েনি। বিমানবন্দর থেকে হোটেল, তারপর পরদিনের সূচি—সব জায়গাতেই তাকে লড়তে হয়েছে ট্রাফিকের সঙ্গে। মঙ্গলবার দুপুরে তেজগাঁওয়ে এক টেলিকম কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল তার, কিন্তু ৪৫ মিনিট দেরিতে পৌঁছান তিনি—তবু মুখে হাসি অটুট।
এর প্রভাব পড়ে বিকেলের অনুশীলন সূচিতেও। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় দলের অনুশীলন শুরু হয় প্রায় আধঘণ্টা দেরিতে। কিন্তু হামজা মাঠে নামতেই ক্লান্তি, অপেক্ষা—সবকিছু উধাও হয়ে যায়।
প্রায় ১১ দিন ধরে চলছে জাতীয় দলের ক্যাম্প। প্রথমদিকে মাত্র ১৫ জন খেলোয়াড় নিয়ে অনুশীলন শুরু হলেও পরে বসুন্ধরা কিংসের আরও ১০ জন যোগ দেন। কিন্তু হামজা ও কানাডা-জন্ম মধ্যমাঠের খেলোয়াড় শামিত শোমকে ছাড়া কিছু একটা যেন অপূর্ণ ছিল।
মঙ্গলবার যখন হামজা মাঠে প্রবেশ করলেন, মনে হলো যেন সেই শূন্যস্থান পূর্ণ হলো। তিনি এগিয়ে গিয়ে দলনেতা জামাল ভূঁইয়ার সঙ্গে হাসিমুখে করমর্দন করলেন, বল নিয়ে হালকা অনুশীলনে যোগ দিলেন। মুহূর্তেই দলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল নতুন উদ্দীপনা।
অনুশীলন শেষে ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন বলেন, “হামজা ভাইকে পাশে পেলে আমাদের মনোবল বেড়ে যায়। তিনি খুবই পেশাদার, কীভাবে ব্যস্ততার মধ্যেও সবকিছু সামলান—সেটা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।”
এখন কেবল একজন খেলোয়াড়ের অপেক্ষা—শামিত শোম। তিনি মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছেছেন এবং আজ থেকে অনুশীলনে যোগ দেওয়ার কথা।
কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা বলেন, “সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চলছে। আমরা শুধু নেপাল নয়, ভারতের ম্যাচকেও লক্ষ্য করছি। হামজা একদিন মিস করেছে, কিন্তু এখন পুরোপুরি অনুশীলনে আছে। আশা করছি হামজা ও শামিত দুজনই নেপালের বিপক্ষে খেলবে।”
এশিয়ান কাপের মূল পর্বে যাওয়ার আশা শেষ হলেও ১৮ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য গর্ব ও প্রতিশোধের। আগের রাউন্ডে ভারতের কাছে হারটা এখনো কষ্ট দেয়। সেই ম্যাচে সেরা পারফরমারদের একজন ছিলেন হামজা চৌধুরী—এবার তার চোখে প্রতিশোধের আগুন।
