গাজা যুদ্ধ নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে কাতারের রাজধানী দোহায়। সোমবার দুপুরের আগে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের মধ্যকার পরোক্ষ আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা।
এই আলোচনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ওয়াশিংটনে তার সঙ্গে দেখা করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আলোচনার অগ্রগতিতে উৎসাহ দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, “এই সপ্তাহেই একটি চুক্তির ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।”
দোহায় রবিবার শুরু হওয়া আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা ও বন্দিমুক্তি বিনিময় চুক্তি সম্পন্ন করা। দুই ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, আলোচনার খসড়া প্রস্তাবে ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির কথা রয়েছে। এই সময়ে হামাস জীবিত ১০ জন জিম্মি ও কয়েকটি মৃতদেহ হস্তান্তর করবে, বিনিময়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে।
তবে হামাস কিছু শর্ত দিয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার, যুদ্ধবিরতির সময় নতুন হামলা না চালানোর নিশ্চয়তা এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা পুনর্বহাল।
নেতানিয়াহু বলেছেন, তার দোহা পাঠানো প্রতিনিধিদের “স্পষ্ট নির্দেশনা” দেওয়া হয়েছে, যেন তারা নির্ধারিত শর্তে সমঝোতা চূড়ান্ত করেন।
এই আলোচনার ঠিক আগেই গাজা থেকে উঠে এসেছে আরও প্রাণহানির খবর। সোমবার গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানায়, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। যদিও এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে হামাসের ২০২৩ সালের প্রতিরোধ অভিযানের পর ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৫৭ হাজার ৪১৮ জন মানুষ। অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে গঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) সম্প্রতি গাজায় খাদ্য বিতরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে তাদের কার্যক্রম নিয়ে উঠেছে বিতর্ক। বিভিন্ন ত্রাণকেন্দ্রে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে, এখন পর্যন্ত ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ এইসব কেন্দ্রের আশেপাশে খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই সংখ্যা ৭৫১ বলে জানিয়েছে।
নতুন করে শুরু হওয়া আলোচনার মাধ্যমে হয়তো সংঘাতের একটি রাজনৈতিক সমাধানের পথ উন্মোচিত হতে পারে। তবে চূড়ান্ত সমঝোতার জন্য এখনও অনেক পথ বাকি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। গাজায় মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত থাকায় আলোচনার গতি এবং বাস্তবায়ন এখন আন্তর্জাতিক মহলের প্রধান নজরদারির বিষয়।