Monday, June 23, 2025
Homeজাতীয়যশোরে বাণিজ্যিক আঙ্গুর চাষে সাফল্য

যশোরে বাণিজ্যিক আঙ্গুর চাষে সাফল্য

যশোর, ২৬ মে, ২০২৫ (ডেপ্রবা) : যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় প্রবাস ফেরত কামরুজ্জামান এমিল নামের এক কৃষকের উদ্যোগে গড়ে ওঠা আঙ্গুরের বাগান এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মাত্র দুই বিঘা জমিতে বিদেশি মানের আঙ্গুর চাষ করে তিনি দেখিয়েছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও যত্নবান পরিচর্যায় বাংলাদেশের মাটিতেও সম্ভব বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর ফলানো।

কোরিয়াতে কাজ করার সময় আঙ্গুরের বাগান দেখে দেশের মাটিতেও একই ধরনের ফল চাষের স্বপ্ন দেখেছিলেন এমিল। দেশে ফিরে ইউটিউব দেখে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, পরে ভারতের আইসিআর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেন মোকাররম হোসেন নামের এক কৃষি উদ্যোক্তার মাধ্যমে। ফলস্বরূপ তিনি বাইকুনুর জাতের আঙ্গুরের চারা সংগ্রহ করে শুরু করেন চাষ।

এমিল জানান, “প্রথম বছরে খরচ হয় প্রায় এক লাখ টাকা প্রতি বিঘায়। গাছের প্রাথমিক চারার খরচ, ফাউন্ডেশন বা মাচার খরচ, সার, ওষুধ ও পরিচর্যার ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত।” তবে প্রথম বছরেই তিনি প্রায় দুই লাখ টাকার আঙ্গুর বিক্রি করেছেন এবং আশা করছেন পুরো মৌসুমে আয় হবে প্রায় তিন লাখ টাকা।

প্রায় ৩০০টি গাছ লাগিয়েছিলেন, তার মধ্যে ২৭০টি টিকেছে। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ৮-১০ কেজি আঙ্গুর পেয়েছেন প্রথম বছরে। দ্বিতীয় বছর এই ফলন দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছেন তিনি।

আঙ্গুর চাষে সফলতার অন্যতম কারণ সঠিক জাত নির্বাচন ও পরিচর্যার পরিকল্পনা। মোকাররম হোসেন জানান, “শুধু গাছ লাগালেই হবে না, প্রুনিং, সার প্রয়োগ, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণসহ প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হয়।” তিনি নিজেই ২৭ বিঘা জমিতে আঙ্গুরের বাগান গড়েছেন এবং অন্যান্য উদ্যোক্তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানান, যশোর অঞ্চলের মাটি উঁচু এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো, যার ফলে বাইকুনুর জাতের আঙ্গুরের জন্য অঞ্চলটি উপযোগী। মাটির পিএইচ ৬.৫ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে হওয়ায় গাছগুলো সহজেই অভিযোজিত হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় লক্ষাধিক টনের বেশি আঙ্গুর আমদানি হয়। স্থানীয়ভাবে এমন মানসম্পন্ন আঙ্গুর উৎপাদন করা গেলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় সম্ভব। বাইকুনুর জাতটি দেশীয় আবহাওয়ায় ভালো ফলন দেওয়ায় এর চাষ সম্প্রসারণযোগ্য বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

ড. মেহেদী মাসুদ, ফল গবেষক, বলেন, “এই জাতটি নিয়ে গবেষণা করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ টেকনোলজি তৈরি করা হলে সারা দেশের কৃষকরা উপকৃত হবেন। আঙ্গুর এখন আর শুধু সৌখিন চাষের ফসল নয়, এটি বাণিজ্যিকভাবে সফল একটি ফল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।”

সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে যদি প্রয়োজনীয় হরমোন ও কীটনাশক দেশেই উৎপাদন বা আমদানি নিশ্চিত করা যায়, তবে আরও বেশি কৃষক এই চাষে আগ্রহী হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অবশেষে উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান এমিল বলেন, “স্বপ্ন দেখার সাহস থাকলে দেশের মাটিতেও সবকিছু সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সঠিক দিকনির্দেশনা ও নিষ্ঠা।”

এই উদ্যোগ নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের জন্য হতে পারে একটি কার্যকর অনুপ্রেরণা।

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • ফল-ফুল

RELATED NEWS

Latest News