ঢাকা মেট্রো রেলের পিলারগুলো এখন এক ধরনের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের জুলাই আন্দোলনের মূল প্রতিবাদী মুহূর্তগুলোকে তুলে ধরে একটি গ্রাফিটি ক্যাম্পেইন ঢাকা শহরের বিভিন্ন মেট্রো রেল পিলারে সজ্জিত করা হয়েছে।
এটি শুরু করেছিলেন স্থানীয় সরকার, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ শোজিব ভূঁইয়া, যার মাধ্যমে এই গ্রাফিটি প্রকল্পটি গাজীপুর, ফার্মগেট, আগারগাঁও এবং বিজয় সরণি এলাকার মেট্রো রেল পিলারগুলোর ওপর ফুটে উঠেছে।
এই শিল্পকর্মগুলি গত ১৬ বছরের রাজনৈতিক দমন, জনবিক্ষোভ এবং ঐতিহাসিক ঘটনা সম্বন্ধে গল্প বলে। এসবের মধ্যে রয়েছে ২০০৯ সালের পিলখানা বিডিআর হত্যাকাণ্ড, খালেদা জিয়ার ক্যানটনমেন্ট বাসভবন থেকে উৎখাত, শেয়ারবাজারের পতন, ইলিয়াস আলী অপহরণ, শাপলা চত্বরে পুলিশী দমন, হলি আর্টিজান হামলা, এবং রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনা।
অন্যদিকে, বিভিন্ন সামাজিক ও সম্প্রদায়িক সমস্যা যেমন নাসিরনগর হামলা, টনুর ধর্ষণ ও হত্যা, বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ড এবং সীমান্তে ফেলানী খাতুনের হত্যা নিয়ে গ্রাফিটিতে শক্তিশালী চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই গ্রাফিটি প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ২ আগস্ট, শনিবার, ঢাকার বিজয় সরণি মেট্রো রেল স্টেশন প্রাঙ্গণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আসিফ মাহমুদ শোজিব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, “এই গ্রাফিটি আমাদের জন্য একধরনের স্মৃতিচিহ্ন, যা আওয়ামী শাসনের অন্ধকার দিন এবং জনগণের সাহসী প্রতিরোধের ছবি তুলে ধরবে। এগুলো ভবিষ্যতে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে যে, এই দেশে আর কোনো স্বৈরাচার শাসন গড়ে উঠতে পারবে না।”
গ্রাফিটি প্রকল্পটির মাধ্যমে, আন্দোলনের ছাত্র-স্বেচ্ছাসেবকরা কল্পনা এবং প্রতিবাদী শিল্পের মাধ্যমে জাতীয় প্রতিরোধের এক মর্মস্পর্শী গল্প সৃষ্টি করেছেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, মোহতারিমা নূর বলেন, “গ্রাফিটি ছিল গত জুলাই আন্দোলনের অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র। এই শিল্পকর্মগুলো শুধু মেট্রো রেল পিলারগুলিকে সজ্জিত করে না, বরং আমাদের সেই turbulent সময়গুলোর এক মর্মান্তিক স্মৃতি হিসেবে কাজ করে।”
এটি একটি শক্তিশালী পাবলিক উদ্যোগ যা একটি নগর ট্রানজিট করিডোরকে ইতিহাসের একটি জীবন্ত ক্যানভাসে পরিণত করেছে, যা স্মৃতি ও বার্তা দুইটি ধারণ করছে।