গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ধারা ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে স্বতন্ত্র পর্যালোচনার জন্য জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছে সরকার। শনিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডেইলি স্টার সেন্টারে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এই তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “সাংবাদিকতা দীর্ঘদিন রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে ছিল। আমরা জানতে চাই গত এক দশকেরও বেশি সময়ে আসলে কী ধরনের সাংবাদিকতা হয়েছে।” এই উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আলোচনায় মূলত মিডিয়া রিফর্ম কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন সাংবাদিক, সম্পাদক ও সম্প্রচার মাধ্যমের প্রতিনিধিরা। তারা জানান, চার মাস আগে কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়া হলেও এখনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
শফিকুল আলম বলেন, “সরকার সাংবাদিকদের সুরক্ষায় মূল সংস্কার শুরু করেছে। এমন কোন সংস্থা থাকবে না যারা সাংবাদিকদের হুমকি দিতে পারবে। গণমাধ্যম যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
সাংবাদিকদের অভিযোগ ছিল, পূর্ববর্তী সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় গণমাধ্যম লাইসেন্স দেওয়া হতো এবং সংবাদমাধ্যমগুলোকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হতো। সাংবাদিকদের নামে খুনসহ বিভিন্ন ধরনের মামলা দায়েরের ঘটনাও সামনে আসে, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বতন্ত্র সম্প্রচার কমিশন গঠন, সাংবাদিকদের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ এবং আলাদা বেতন স্কেল চালুর দাবি তোলা হয়। শফিকুল আলম নিজেও বলেন, “সাংবাদিকদের জন্য মাসিক বেতন কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা হওয়া উচিত।”
বিজেসি পক্ষ থেকে জোরালোভাবে বলা হয়, অবিলম্বে কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গণমাধ্যমে স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে প্রেসসচিব পুনরায় আশ্বস্ত করেন, “অস্থায়ী সরকার সাংবাদিকতা রক্ষায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। যাতে কোনো বাহ্যিক শক্তি গণমাধ্যমকে ভয় দেখাতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
আলোচনা সভাটি সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদা রক্ষা এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বাস্তবায়নের দাবিতে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।