হাওর অঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে একটি বিস্তৃত মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করেছে সরকার। এই পরিকল্পনার আওতায় চারটি মূল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হলো: পাঁচটি হাওরে বাঁধ নির্মাণ, বনায়ন, পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিয়ন্ত্রণ এবং নীতিমালা প্রণয়ন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মঙ্গলবার সকালে “হাওর সংকট ও সম্ভাবনা” শীর্ষক এক সেমিনারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সায়েদা রিজওয়ানা হাসান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “আমরা নদী আর বন নিয়ে বলি, কিন্তু হাওর নিয়ে কেউ বলে না। কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যায় হাওর নিয়ে আলোচনা। শিক্ষা-স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক কথা হয়, কিন্তু বাস্তব সমাধান দেখা যায় না। আমি নিজেও হবিগঞ্জের হাওর এলাকার মানুষ, তাই এই ইস্যুটা আমার খুব আপন।”
রিজওয়ানা হাসান জানান, ২০২৩ সালে পূর্ববর্তী সরকারের আমলেই মাস্টারপ্ল্যানটি তৈরি হয়। তার দায়িত্ব গ্রহণের আগেই পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে সেটি হালনাগাদ ও সংশোধন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, হাওরবাসীর মতামতকে এই পরিকল্পনায় যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বনায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি জানান, কোন কোন হাওরে গাছ লাগানো হবে, সে তালিকা ইতিমধ্যেই প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। অনেক হাওরে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, যার মধ্যে হাকালুকি হাওর সম্পর্কিত একটি মামলাও তিনি নিজেই দায়ের করেছেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে যখন পানি সরে যাবে, তখন গাছ লাগানো হবে।
হাওর পর্যটন নিয়ে তিনি বলেন, একটি খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে, যা শিগগিরই প্রকাশিত হবে। এতে পর্যটকদের আচরণ, করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়সহ প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা থাকবে।
তিনি বলেন, “অনেকে যেমন সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে জোরে গান বাজায়, হাওরে এমন আচরণ করলে তা পরিবেশবান্ধব পর্যটন হবে না। এজন্য স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ বাড়াতে হবে, জেলা প্রশাসকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।”
হাওরকে বিশ্বের একটি দুর্লভ বাস্তুতন্ত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটি সংরক্ষণ করতেই হবে। কৃষিজমি থেকে মাটি উত্তোলনের মতো ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড ঠেকাতে হাওরের সীমানা চিহ্নিত করতে হবে।”
তিনি হাওর এলাকায় “ভাসমান হাসপাতাল” চালুর প্রয়োজনীয়তা এবং মৎস্য উৎপাদন ও আহরণে নীতিমালার দিকেও গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে বিএনপির গবেষণা সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম বলেন, “হাওরে সংকট থাকলেও এর সম্ভাবনাও ব্যাপক। এখানকার মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা হাওরের ওপরই নির্ভরশীল। সমন্বিত উদ্যোগেই হাওরের অগ্রগতি সম্ভব।”