মায়ের বাঁচিয়ে রাখা খাবার, উপবৃত্তিতে বিড়ম্বনা আর অসীম অধ্যবসায়ের গল্প
শিশু অবস্থায় নিজের মায়ের সঙ্গে অন্যের জমিতে কাজ করা যে মেয়েটি একসময় একবেলা পেটভরে খেতে পারত না, আজ সে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তাঁর মা এখনও নিজের নাম লিখতে জানেন না, কিন্তু মেয়েটি এখন একজন প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা।
তাঁর জীবনের শুরুটা ছিল লড়াইয়ের। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন, সেখান থেকে বাঁচিয়ে রাখা ভাতই হতো মেয়ের একমাত্র আশ্রয়। মেয়েটি যখন স্কুলে যেত, তখন উপবৃত্তি নিতে গিয়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হতো—কারণ মা স্বাক্ষর করতে পারতেন না, কখনো কখনো ভুল সই দিতেন। অন্যদের থেকে আলাদা করে সবার শেষে দেওয়া হতো উপবৃত্তি।
প্রথম আলো-কে তিনি বলেন, “মা চাইতেন আমি যেন আর কখনো এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না পড়ি।”
চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর জীবনই বদলে যেতে বসেছিল। শহর থেকে কেউ একজন গ্রামে কাজের মেয়ের খোঁজে এসেছিলেন। দরিদ্র পরিবার হওয়ায় তাকে পাঠানোর পরামর্শ দেয় অনেকে। কিন্তু সেদিন মেয়েটি জিজ্ঞেস করেছিল, “ওই বাড়িতে কি আমাকে স্কুলে ভর্তি করানো হবে?”—উত্তর ‘না’ ছিল বলেই সে যায়নি।
এসএসসিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন নিজ গ্রাম ও বিদ্যালয়ে। এরপর প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সহযোগিতায় উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যান। অনার্স শেষ করার পর গ্রামের প্রথম সরকারি চাকরিপ্রাপ্ত নারী হিসেবে নিয়োগ পান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে।
তিনি বলেন,
“যে মেয়েটি একসময় পেটভরে খেতে পারত না, সে আজ পাঁচ-ছয়জনের পেটের সংস্থান করতে পারে। আমার মা এখনও নিজের নাম লিখতে জানেন না, আর আমি আজ একজন গেজেটেড কর্মকর্তা।”
এই গল্প কেবল একটি মেয়ের নয়, বরং একজন মায়ের স্বপ্ন, সংগ্রাম ও ভালোবাসার বাস্তব প্রতিফলন।