জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘জেন্ডার বাজেট রিপোর্ট ২০২৫-২৬’ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে নারী-সংশ্লিষ্ট খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৭৬৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ৩৩ শতাংশ এবং দেশের মোট জিডিপির ৪.২ শতাংশ।
যদিও FY25-এর সংশোধিত বাজেটে এ অনুপাত ছিল ৪.৪ শতাংশ, তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই হালকা পতন সত্ত্বেও বাজেটে নারীর অন্তর্ভুক্তি এবং সমতার প্রবণতা সুদৃঢ়ভাবে অব্যাহত রয়েছে।
এবারের পরিচালন বাজেটে নারী-উপযোগী ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৯৮৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা মোট পরিচালন বাজেটের ৩১.৪ শতাংশ। এই অনুপাত গত বছরের তুলনায় অপরিবর্তিত থাকলেও অর্থের পরিমাণ বেড়েছে, যা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নারী সংবেদনশীল কার্যক্রমে ক্রমবর্ধমান মনোযোগকে নির্দেশ করে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, FY23-এ পরিচালন বাজেটের নারী-সংশ্লিষ্ট অংশ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। এরপর FY24-এ তা দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৬ কোটি এবং FY25-এ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
অন্যদিকে, উন্নয়ন বাজেটে নারীবান্ধব বরাদ্দের অনুপাত কিছুটা কমে এসেছে। FY26-এ এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৯ হাজার ৭৮০ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যা উন্নয়ন বাজেটের ৩৬.৬ শতাংশ। পূর্ববর্তী বছরগুলোতে এ অনুপাত ছিল যথাক্রমে ৩৭.৯ শতাংশ (FY25), ৩৬.৮ শতাংশ (FY24), ও ৩৭.৫ শতাংশ (FY23)।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নারীর জন্য সংবেদনশীল বাজেট বরাদ্দ এখন আর কয়েকটি নির্দিষ্ট কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ নেই, বরং সরকারি আর্থিক কাঠামোতে একটি কাঠামোগত অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে নারী সংবেদনশীল প্রকল্পগুলোর প্রতি গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে।
যদিও সামান্য পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট সূচকে, সরকার জেন্ডার বাজেটিংকে একটি স্থায়ী নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যেও নারী-সংশ্লিষ্ট বাজেট বরাদ্দ অব্যাহত থাকায় এটি স্পষ্ট হয় যে, এই খাতে সরকারের অঙ্গীকার শুধুমাত্র পরিসংখ্যানেই নয়, বাস্তব ফলাফলেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাজেটে নারীর অংশগ্রহণ শুধু সংখ্যার নিরিখে নয়, বরং ফলাফল ও ক্ষমতায়নের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে নারীদের জন্য সমান সুযোগ, সেবা ও সম্পদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করাই এখন সরকারের মূল লক্ষ্য।