গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিহত ফিলিস্তিনির প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ১ লাখে পৌঁছেছে, যা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ। ইসরায়েলের প্রভাবশালী দৈনিক হা’রেতজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৬,৩০০ জনের মৃত্যুর তথ্য দিলেও, স্বাধীন আন্তর্জাতিক গবেষকরা এই সংখ্যা অনেক কম বলে মনে করছেন।
মাইকেল স্প্যাগাটের নেতৃত্বে জরিপ
লন্ডনের রয়্যাল হোলোওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুহারের ওপর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাইকেল স্প্যাগাটের নেতৃত্বে একটি দল গাজার ২,০০০ পরিবারকে (প্রায় ১০,০০০ ব্যক্তি) জরিপের মাধ্যমে এই গবেষণা চালায়।
তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গাজায় সরাসরি সহিংসতায় প্রায় ৭৫,২০০ জন নিহত হয়েছেন, যার বেশিরভাগই ইসরায়েলি অস্ত্রের আঘাতে।
এছাড়া, ক্ষুধা, ঠান্ডা, চিকিৎসাহীনতা এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভেঙে পড়া পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত আরও ৮,৫৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
নারী ও শিশুর মৃত্যু হার সর্বাধিক
গবেষণা অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও ১৮ বছরের নিচের শিশু। এই হার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যেকোনো যুদ্ধের তুলনায় অত্যন্ত ব্যতিক্রমী এবং দুঃখজনক।
প্রফেসর স্প্যাগাট বলেন, “গাজার ৪ শতাংশ জনসংখ্যা নিহত হয়েছে। ২১শ শতকে এমন মৃত্যুহার আর কোথাও দেখা যায়নি।”
তিনি আরও বলেন, “গাজা যুদ্ধকে ২১শ শতাব্দীর অন্যতম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।”
অন্যান্য সংঘর্ষের তুলনামূলক বিশ্লেষণ
প্রতিবেদনে জানানো হয়, সিরিয়া, ইউক্রেন ও সুদানের যুদ্ধে মোট নিহতের সংখ্যা গাজার চেয়ে বেশি হলেও, বেসামরিক মৃত্যুর অনুপাত এবং জনসংখ্যার তুলনায় মৃত্যুহারে গাজা শীর্ষে।
নারী ও শিশুর অংশবিশেষও অন্যান্য যুদ্ধের তুলনায় অনেক বেশি। কসোভো ও সিরিয়ায় এই হার ছিল ২০ শতাংশ, সুদানে ২৩ শতাংশ এবং উত্তর ইথিওপিয়ায় মাত্র ৯ শতাংশ।
আইনগত জটিলতা ও অভিযোগ
অন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (ICC) গত নভেম্বরেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
একইসাথে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (ICJ) গণহত্যার মামলায়ও মুখোমুখি হয়েছে, যেখানে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, তবুও অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে।
হা’রেতজ-এর প্রতিবেদনে উঠে আসা এই চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের মাত্রা আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।