গাজা যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্যে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা আবারও শুরু হয়েছে কাতারে। এ আলোচনার ঠিক আগমুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
রবিবার দোহায় শুরু হওয়া আলোচনার নতুন ধাপে যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি বন্দি বিনিময় নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত একটি খসড়া চুক্তির ভিত্তিতে এগোচ্ছে এই আলোচনা।
একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, সোমবার দুই পক্ষ পরোক্ষভাবে আবারও আলোচনায় বসছে। তবে জিএমটি দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত আলোচনার আনুষ্ঠানিক সূচনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, রবিবারের আলোচনায় দুই পক্ষ আলাদা কক্ষে অবস্থান করলেও মধ্যস্থতাকারীরা মতবিনিময় চালিয়ে গেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, “আশা করছি এই সপ্তাহেই হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তি হবে। আমরা অনেক জিম্মিকে মুক্ত করেছি, তবে আরও অনেকে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে।”
নেতানিয়াহু বলেন, “ওয়াশিংটন সফরে আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি কার্যকর চুক্তির মাধ্যমে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা।”
এদিকে, দুই বছরের দীর্ঘ যুদ্ধের পর মানবিক বিপর্যয়ে পড়া গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে যুক্তরাষ্ট্র জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
নেতানিয়াহু জানান, তিনি আলোচনাকারী দলকে দোহায় পাঠিয়েছেন এবং “স্বচ্ছভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন” যেন একটি গ্রহণযোগ্য চুক্তিতে উপনীত হওয়া যায়।
তবে তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, হামাসের প্রস্তাবিত কিছু শর্ত “গ্রহণযোগ্য নয়”।
ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিপরীতে হামাস ১০ জীবিত জিম্মি ও কয়েকটি মৃতদেহ ফেরত দেবে। তবে তারা আরও কিছু শর্তও দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, যুদ্ধবিরতির সময় পুনরায় হামলা না করার নিশ্চয়তা এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে আগের মতো সহায়তা বিতরণের ব্যবস্থা।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ বলেন, “ওয়াশিংটনে নেতানিয়াহুর মিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সব জিম্মিকে ঘরে ফেরানোর প্রচেষ্টায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।”
তবে আলোচনা চলাকালে গাজায় সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, সোমবার ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন একটি ক্লিনিকে আশ্রয় নেওয়া সাধারণ মানুষ।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তারা স্বাধীনভাবে হতাহতের সংখ্যা যাচাই করতে পারেনি, কারণ অনেক এলাকায় প্রবেশ কঠিন এবং মিডিয়া কভারেজ সীমিত।
গাজা সিটির বাসিন্দা সালমান কুদুম এএফপিকে বলেন, “আমরা জানি না কোথায় যাব বা কী করব। দোহায় যারা আলোচনা করছে, তাদের চাপ সৃষ্টি করতে হবে যুদ্ধবিরতির জন্য। জনগণের আর সহ্য করার শক্তি নেই।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা গাজাজুড়ে “সন্ত্রাসী ঘাঁটি, অস্ত্র মজুতকেন্দ্র, পর্যবেক্ষণ পোস্ট এবং সামরিক স্থাপনা” লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৫২৩ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।
উল্লেখযোগ্যভাবে, মে মাসে ইসরায়েল আংশিকভাবে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা সহায়তা অবরোধ তুলে নেয় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে গঠিত Gaza Humanitarian Foundation (GHF) এর অধীনে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়।
তবে নতুন এই ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে এবং সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা নিয়মিত ঘটছে।
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ইতিবাচক সাড়া মিললেও বাস্তবতা বলছে, একদিকে প্রাণহানি ও মানবিক সংকট, অন্যদিকে রাজনৈতিক অবস্থানের কঠোরতা — এ দুইয়ের মাঝে সেতুবন্ধ গড়ে তোলা এখনো চ্যালেঞ্জিং।