গাজায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়া দুর্ভিক্ষকে ‘মানবসৃষ্ট’ আখ্যা দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ড. তেদ্রোস আধানম গেব্রেইসুস বুধবার বলেছেন, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে খাদ্য সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হচ্ছে। এতে পুরো জনগণ মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে তেদ্রোস বলেন, “গাজার একটি বড় জনগোষ্ঠী এখন অনাহারে ভুগছে। আপনি এটিকে আর কিছু বলবেন কিভাবে? এটি স্পষ্টতই এক ধরনের গণদুর্ভিক্ষ এবং এটি মানুষেরই সৃষ্টি।”
এর আগে একই দিনে মেডিসিন সঁ ফ্রঁতিয়ের (এমএসএফ), অক্সফামসহ ১১১টি সাহায্য সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে সতর্ক করেছে যে, গাজায় দুর্ভিক্ষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
তাদের ভাষায়, “আমাদের সহকর্মীরা এবং যাদের আমরা সহায়তা করছি, তারা দিন দিন ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।”
ইসরায়েলের ২১ মাসের দীর্ঘ সামরিক অভিযান ও অবরোধের ফলে গাজা উপত্যকায় ২১ লাখ মানুষ চরম খাদ্যসংকটে পড়েছে। যদিও মে মাসের শেষ দিকে দেশটি সামান্য সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেয়, কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।
ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, “গাজার মানুষদের জন্য বোমা ও গুলির পাশাপাশি নতুন এক হত্যাকারী এসেছে—অনাহার। আমরা এখন অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি দেখছি।”
তিনি জানান, গাজায় বর্তমানে শিশুদের মধ্যে গ্লোবাল অ্যাকিউট ম্যালনিউট্রিশনের হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের ২০ শতাংশের বেশি অপুষ্টিতে ভুগছেন, যা অনেক ক্ষেত্রেই গুরুতর।
এ বছরের শুরু থেকে গাজায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অপুষ্টিজনিত কারণে ২১ জন মারা গেছে বলে ডব্লিউএইচও নিশ্চিত করেছে। তবে সংস্থাটি মনে করছে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
গাজার সর্ববৃহৎ হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, গত তিন দিনেই ২১ শিশু অপুষ্টি ও অনাহারে মারা গেছে।
তেদ্রোস আরও বলেন, “খাদ্য সহায়তার প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পথ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণেই এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।”
জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর মঙ্গলবার জানিয়েছে, গাজায় খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে মে মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত ১,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন।
তেদ্রোস বলেন, “শুধু নিহতই নয়, হাজার হাজার মানুষ আহতও হয়েছেন। মানুষ খাওয়ার জন্য যখন নিজের জীবন বাজি রাখে, তখন বোঝা যায় বিপর্যয় কতটা গভীর।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা পূর্ণ প্রবেশাধিকার দাবি করছি। আমরা যুদ্ধবিরতি চাই। আমরা চাই রাজনৈতিক সমাধান—একটি স্থায়ী সমাধান।”
বিশ্বব্যাপী মানবিক সংস্থাগুলো এখন গাজার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং রাজনৈতিক উদ্যোগের আশায় দিন গুনছে।