শনিবার গাজা সিটিতে ফিরে এসেছেন কয়েক লক্ষ ফিলিস্তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে হামাস।
মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ শনিবার তেল আবিবে ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেন, “আপনাদের সাহস সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। বন্দিদের প্রতি বার্তা, আপনারা ঘরে ফিরছেন।” সেই সময় ভিড়ের মধ্যে শোনা যায়, “ধন্যবাদ ট্রাম্প” শ্লোগান।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওসামা হামদান বলেন, “সোমবার সকাল থেকেই বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
দুই বছর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর শুরু হয়েছিল ইসরায়েলের পাল্টা অভিযান। ওই সংঘাতে নিহত হয়েছে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এখন এই চুক্তির আওতায় ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষ বন্দি ও জিম্মিদের বিনিময় করবে।
হামাস জানিয়েছে, তারা ৪৭ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে, যাদের মধ্যে কেউ জীবিত, কেউ মৃত। এর বিনিময়ে ইসরায়েল মুক্তি দেবে ২৫০ বন্দি ও সাম্প্রতিক অভিযানে আটক ১,৭০০ ফিলিস্তিনিকে। ইসরায়েলি কারা প্রশাসন জানিয়েছে, হস্তান্তরের প্রস্তুতি হিসেবে এসব বন্দিকে নির্দিষ্ট কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বেদরান কাতারে এএফপিকে বলেন, “ট্রাম্প পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে বহু জটিলতা রয়েছে। হামাস মিসরে অনুষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না।” তিনি জানান, হামাসের পক্ষ থেকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
হামাসের মিত্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, “আমরা ইসরায়েলের উপর কোনো আস্থা রাখি না। জায়নিস্ট সরকার যুদ্ধবিরতি সম্মান করবে, এমন বিশ্বাসের সুযোগ নেই।”
ট্রাম্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েল ধাপে ধাপে গাজার শহরগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। এরপর ওই এলাকায় দায়িত্ব নেবে মিশর, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বহুজাতিক বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইসরায়েলে একটি কমান্ড সেন্টার এই প্রক্রিয়া তদারকি করবে।
শনিবার গাজা সফর করেন মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) প্রধান অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার, দূত স্টিভ উইটকফ, ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প। তারা পরে তেল আবিবে যান জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার তথ্যমতে, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি গাজা সিটিতে ফিরে এসেছে।
৫২ বছর বয়সী রাজা সালমি বলেন, “আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটেছি, প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল ভয়ে ভরা। বাড়ি ফিরে দেখি সবকিছু ধ্বংস।”
আরো পড়ুন: গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে বন্দিদের স্থানান্তর শুরু করেছে ইসরায়েল
এএফপির ভিডিওতে দেখা যায়, পুরো শহরজুড়ে ভাঙা ভবন, ধ্বংসস্তূপ আর লোহার জঞ্জাল। অনেকে ধ্বংসস্তুপের ভেতর খুঁজছেন প্রিয়জনের স্মৃতি।
২৮ বছর বয়সী সামি মুসা বলেন, “ধন্যবাদ আল্লাহকে, আমাদের বাড়ি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু শহরটা এখন মৃতপ্রায়। বাতাসেও লেগে আছে মৃত্যুর গন্ধ।”
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা বলেছে, যুদ্ধবিরতি টিকলে গাজায় ১ লাখ ৭০ হাজার টন ত্রাণ পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় নিহত হয়েছে অন্তত ৬৭,৬৮২ জন। তাদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায়, যাতে ইসরায়েলে নিহত হয় ১,২১৯ জন, অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।