গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর ড্রোন ও বিমান হামলায় একদিনেই ৩৭ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৯ জন শিশু রয়েছে।
সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল বলেন, “গাজার বিভিন্ন স্থানে মোট সাতটি ড্রোন ও বিমান হামলায় ৩৫ জন এবং কেন্দ্রীয় গাজার নেতসারিম এলাকায় খাদ্য সহায়তা নিতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি গুলিতে আরও ২ জন নিহত হয়েছেন।”
উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় একটি বাড়িতে বিমান হামলায় তিন শিশুসহ বহু মানুষ নিহত হয় বলে জানানো হয়েছে। গাজা সিটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি স্কুলের পাশে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের ওপর হামলায় আরও ছয় শিশুর প্রাণহানি ঘটে।
গাজা থেকে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি-র পাঠানো চিত্রে দেখা যায়, আল-শিফা হাসপাতালে কমপক্ষে সাতটি মৃতদেহ, যাদের মধ্যে দুটি শিশুর দেহও রয়েছে, সাদা কাপড় ও কম্বলে মোড়ানো অবস্থায় রাখা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই উত্তর গাজার আকাশে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায় বলে দক্ষিণ ইসরায়েল থেকে তোলা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে।
জাবালিয়ায় উদ্ধারকর্মীদের এক ফটোগ্রাফে দেখা যায়, একজন আহত ব্যক্তিকে পিঠে রক্ত নিয়ে সহায়তা করছেন সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে গাজার অনেক এলাকায় সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা ও তথ্য সংগ্রহের সীমাবদ্ধতার কারণে মৃতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
গাজা যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের আকস্মিক আক্রমণের জবাবে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের ওই আক্রমণে ১ হাজার ২১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল বলে জানায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এর জবাবে চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৬ হাজার ৪১২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ এই সংখ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য বলে উল্লেখ করেছে।
সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ শেষে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর পর ইসরায়েল জানায়, তারা আবারও গাজা অভিযানে মনোযোগ দেবে। কারণ এখনো হামাসের হাতে বেশ কিছু ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন।
কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের মধ্যস্থতায় নতুন করে গাজা যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কাতারের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, “যদি এই মুহূর্তে আমরা যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে কাজে না লাগাই, তবে এটি আবারও একটি হারানো সুযোগ হয়ে যাবে।”
সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শিশু ও বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।