গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকটের অবসানে ইসরায়েলের প্রতি ত্রাণ সহায়তায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির শীর্ষ নেতারা।
শুক্রবার বার্লিন থেকে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ বলেন, “গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় এখনই বন্ধ করতে হবে।”
তারা বলেন, “ইসরায়েল সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি যেন অবিলম্বে ত্রাণ সরবরাহের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং জাতিসংঘ ও মানবিক সংস্থাগুলোকে তাদের কাজ নির্বিঘ্নে করতে দেয়।”
ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “নাগরিকদের মৌলিক প্রয়োজন যেমন খাদ্য ও পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাতে আর বিলম্ব করা চলবে না।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “মানবিক সহায়তা আটকে রাখা অগ্রহণযোগ্য।”
বর্তমানে গাজা উপত্যকায় ২১ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ১০০টির বেশি ত্রাণ ও মানবাধিকার সংস্থা এই সপ্তাহে সতর্ক করে বলেছে, সেখানে ‘গণদুর্ভিক্ষ’ ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ‘মানবসৃষ্ট সংকট’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
ইসরায়েল অবশ্য এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। মার্চ মাসে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি, যা পরে আংশিকভাবে শিথিল করা হলেও জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন বিতরণ ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
ইউরোপীয় নেতারা বলেন, “এখন সময় এসেছে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার। আমরা সব পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়।”
তারা আরও বলেন, “এই যুদ্ধবিরতি এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইসরায়েলি, ফিলিস্তিনি এবং পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করতে আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত।”
শুক্রবার গাজা সংকট নিয়ে জরুরি ফোনালাপও করেছেন স্টারমার, মাখোঁ ও মার্জ।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার মাধ্যমে এই সংঘাতের সূচনা হয়। এতে ১,২১৯ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
এরপর ইসরায়েলের চালানো সামরিক অভিযানে গাজায় এ পর্যন্ত ৫৯,৬৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ।
৭ অক্টোবরের হামলায় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে এখনও ৪৯ জন গাজায় বন্দি রয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, এদের মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত মানবিক সমাধান খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করছে।