গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের প্রধান মোহাম্মদ আবু সালমিয়া জানিয়েছেন, গত ৭২ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের বিভিন্ন হাসপাতালে অপুষ্টি ও অনাহারে অন্তত ২১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এই মৃত্যুসমূহ গাজা সিটির আল-শিফা, দেইর আল-বালাহর আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল এবং খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে রেকর্ড করা হয়েছে।”
চলমান যুদ্ধ ও অবরোধে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শিশু অপুষ্টি ও ক্ষুধাজনিত জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসছে। আবু সালমিয়া বলেন, “প্রতিটি মুহূর্তে গাজার হাসপাতালগুলোতে অনাহারগ্রস্ত শিশুরা আসছে। আমরা এক ভয়াবহ মৃত্যুহারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।”
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার রাতে সতর্ক করে বলেন, “মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার শেষ অবলম্বনগুলোও এখন ভেঙে পড়ছে।” তিনি বলেন, গাজায় শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অপুষ্টি সংক্রান্ত ঘটনা বাড়ছে এবং তা গভীর উদ্বেগজনক।
চলতি বছরের ২ মার্চ, ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। এই সময়ের মধ্যে কোনো খাদ্য বা ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। মে মাসের শেষ দিকে সামান্য কিছু ট্রাক প্রবেশের অনুমতি পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল অত্যন্ত অপ্রতুল।
যুদ্ধবিরতির সময়ে যে খাদ্যসামগ্রী মজুত করা হয়েছিল, তা দ্রুত শেষ হয়ে যায়। ফলে ২০ লাখের বেশি মানুষের এই ভূখণ্ডে অকল্পনীয় খাদ্য সংকট দেখা দেয়।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার উপপরিচালক কার্ল স্কাও চলতি জুলাই মাসের শুরুতে গাজা সিটি সফর করে বলেন, “এই পরিস্থিতি আমার দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট।”
গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা রোববার জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে তীব্র ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে অন্তত তিন নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
এমন সংকটময় সময়ে সোমবার ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাসহ দুই ডজনের বেশি দেশ যুদ্ধ অবসান, জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় অবাধ ত্রাণ সরবরাহের দাবি জানিয়েছে।
২২ জুলাই দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের মাওয়াসি এলাকায় এক চ্যারিটি রান্নাঘরের সামনে শিশু-কিশোরদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তারা গরম খাবার সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিল।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে, অবরোধ চলতে থাকলে আরও বহু শিশুর জীবন বিপন্ন হবে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।