Sunday, June 22, 2025
Homeআন্তর্জাতিকগাজায় ইসরায়েলি অভিযানে মানবিক বিপর্যয়, খাদ্য ও চিকিৎসার তীব্র সংকট

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে মানবিক বিপর্যয়, খাদ্য ও চিকিৎসার তীব্র সংকট

প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৫, ৪:১৩ এএম
আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চলমান আক্রমণ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত করছে এলাকাটিকে। উত্তর গাজা এবং খান ইউনিসে চালানো তীব্র বোমাবর্ষণে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে আকাশ। নিহত স্বজনদের লাশ ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন অনেকে, যারা ছিলেন সাধারণ বেসামরিক নাগরিক।

গাজার নাসের হাসপাতালের সামনে এমনই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান হঠাৎ করে বোমা ফেলে পুরো বাড়ি ধ্বংস করে দেয়। নিহতদের মধ্যে আমার বোন, তার স্বামী এবং শিশু সন্তানরাও ছিল।”

অভিযোগ রয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা আবারও ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। যদিও ২০০৫ সালে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট এ ধরনের চর্চাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, তবুও বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক দুই ইসরায়েলি সেনা এমন taktik ব্যবহার করার কথা স্বীকার করেছেন।

এদিকে গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৯টি বর্তমানে আংশিকভাবে চালু রয়েছে। বেশিরভাগই গোলাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। জরুরি বিভাগের উপর চাপ বেড়েছে বহুগুণ, বিশেষ করে আল-শিফা হাসপাতালের। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী ভর্তি করা হচ্ছে যেখানে পর্যাপ্ত বিছানাও নেই।

খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি চ্যারিটি কিচেনে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি এক বাটি ডালসুপের আশায় অপেক্ষা করছেন। খাবার এবং ওষুধ পৌঁছাতে না পারায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপের মুখে ইসরায়েল ১১ সপ্তাহের অবরোধ আংশিকভাবে তুলে নিলেও এখনও অনেক সাহায্য আটকে আছে সীমান্তে। নিরাপত্তা ও বণ্টন ঘাটতির কারণে অনেক ট্রাক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না।

আরও পড়ুন:

একজন ফিলিস্তিনি মা জানান, “আমার একটি মেয়ে শহীদ হয়েছে, অপর মেয়ে আহত। ডাক্তার বলেছে তাকে রুটি খেতে হবে, কিন্তু আমার ঘরে রুটি নেই। আমি রাস্তায় ফেলে রাখা রুটি কুড়িয়ে তা ধুয়ে খাওয়াই।”

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজাকে “দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “যেখানে বন্যার প্রয়োজন, সেখানে এক চামচ সাহায্য দেওয়া হচ্ছে মাত্র।”

গত কয়েক দিনে প্রায় ৪০০ ট্রাককে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও মাত্র ১১৫টি ট্রাকের পণ্য কার্যকরভাবে বিতরণ করা গেছে।

যদিও কিছু বেকারি খুলেছে, তারপরও পরিস্থিতি ভয়াবহ রয়ে গেছে। বাস্তুচ্যুতরা পুরনো রুটি ও পাতলা স্যুপে দিন কাটাচ্ছে।

নজিরবিহীন এ মানবিক সংকটে আন্তর্জাতিক মহলের সক্রিয় ভূমিকা এবং কার্যকর চাপ দরকার বলে মত দিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। সহিংসতা অবসান না হলে, মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

RELATED NEWS

Latest News