Monday, July 14, 2025
Homeআন্তর্জাতিকগাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থা, একে অপরকে দোষারোপ করছে হামাস ও ইসরায়েল

গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থা, একে অপরকে দোষারোপ করছে হামাস ও ইসরায়েল

গাজায় ৬ শিশু নিহত, যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে মতবিরোধ, আলোচনায় অগ্রগতি ব্যাহত

গাজা ভূখণ্ডে ২১ মাস ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে যুদ্ধবিরতি আলোচনার উদ্যোগ আবারও অচলাবস্থার মুখে পড়েছে। হামাস ও ইসরায়েল একে অপরকে দায়ী করছে আলোচনার ব্যর্থতার জন্য। কাতারে অনুষ্ঠিত পরোক্ষ আলোচনায় এখনও পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

এএফপিকে দেয়া এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি পক্ষের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও গাজা ভূখণ্ডে তাদের সেনা মোতায়েন রাখার পরিকল্পনাই মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের এক জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মকর্তা বলেন, “হামাস ইচ্ছাকৃতভাবে সমঝোতা নষ্ট করছে এবং কোনো ধরণের নমনীয়তা দেখাচ্ছে না।”

এদিকে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, রোববার ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬ শিশু ছিল। গাজা সিটির এক পানির পয়েন্টের কাছে এ হামলা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা বাসসাম হামদান জানান, “রাতের ঘুমের মধ্যে বিস্ফোরণ হয়। আমরা ঘর ভেঙে ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করেছি। শিশু দুটি, তাদের বোন ও মা ঘটনাস্থলেই নিহত হন।”

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে সাদা কাপড়ে মোড়ানো মরদেহগুলো নিয়ে আসা হয়, আর রাফাহ শহরে আহতদের গাধার গাড়ি ও স্ট্রেচারে করে চিকিৎসায় নেওয়া হয়।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের তেল আবিবে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের প্রতি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে চুক্তি সম্পন্ন করার আহ্বান জানায়। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে মুক্তিপ্রাপ্ত ইলি শরাবি বলেন, “এখনই সুযোগ, এটি বেশিক্ষণ থাকবে না।”

দুই পক্ষই জানিয়েছে, যদি চুক্তি হয়, তাহলে ১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে, যারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে বন্দি রয়েছে।

তবে ফিলিস্তিনি একটি সূত্র জানায়, হামাসের মূল শর্ত গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার, যা ইসরায়েল মেনে নিচ্ছে না। সূত্র জানায়, ইসরায়েল গাজার প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকায় সেনা রাখার পরিকল্পনা করছে, এতে কয়েক লক্ষ মানুষ সীমান্তবর্তী রাফাহ অঞ্চলে সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে।

হামাসের প্রতিনিধিরা বলেছেন, ইসরায়েলের মানচিত্র গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এটি গাজার পুনঃদখল ও বিচ্ছিন্নীকরণ বৈধতা দেয়। ফলে তারা এমন কোনো প্রস্তাব মানতে পারছে না।

ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, রোববার নতুন মানচিত্র উপস্থাপন করা হতে পারে। এক বিদেশি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ কাতারে পৌঁছানোর পর পরবর্তী ধাপ শুরু হবে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মতে, গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ২৫০টি “সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে” হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর গাজার বেইত হানুন এলাকায় ৩৫টির বেশি হামাস লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা হয়েছে।

গত দুইবারের যুদ্ধবিরতিতে ১০৫ জন জিম্মি মুক্তি পেয়েছিল, বিনিময়ে শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল ইসরায়েল।

বর্তমান আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সূত্র, বিশেষ করে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি ও গাজায় ত্রাণ সরবরাহের বিষয়ে।

তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়েছেন, “হামাসকে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে নিষ্ক্রিয় না করা পর্যন্ত স্থায়ী যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়। নিরস্ত্রীকরণ জরুরি, না হলে ইসরায়েল তা বলপ্রয়োগে করবে।”

RELATED NEWS

Latest News