গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি রোববার টানা তৃতীয় দিনের মতো বহাল ছিল। সোমবার ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। একই দিনে ইসরায়েল পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুদ্ধবিরতি চলার পর হাজারো ফিলিস্তিনি উত্তর দিকে, গাজা সিটির দিকে যাত্রা শুরু করেছেন। শহরটি গত দুই মাস ধরে ইসরায়েলি হামলার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা আবদু আবু সেয়াদা বলেন, “মানুষের মধ্যে আনন্দ আছে, তবে দুই বছরের যুদ্ধের ক্লান্তিও আছে।”
ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শশ বেদ্রোসিয়ান জানান, সোমবার ভোরে ২০ জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি একসঙ্গে মুক্তি পেতে পারেন। তাদের মুক্তির পর নিহত ২৮ জন জিম্মির মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, হামাস সোমবার দুপুরের মধ্যে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেবে। গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর এই সংঘাত শুরু হয়।
ইসরায়েলি জিম্মি সমন্বয়ক গাল হির্শ জানান, যেসব জিম্মির মৃতদেহ হামাস খুঁজে বের করতে পারেনি, তাদের সন্ধানে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সোমবার ইসরায়েলে পৌঁছে সংসদে বক্তব্য রাখবেন। এরপর তিনি মিসরের শার্ম আল শেখে গাজা যুদ্ধের অবসান নিয়ে বিশ্ব নেতাদের সম্মেলনে অংশ নেবেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও সেখানে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসর ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি সম্পন্ন হয়।
ইসরায়েলি বিচার মন্ত্রণালয় জানায়, ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তির তালিকায় রাখা হয়েছে, যাদের অনেকে হত্যা ও গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত। তবে হামাসের শীর্ষ কমান্ডার বা মারওয়ান বারঘুতি, আহমেদ সাদাতের মতো রাজনৈতিক বন্দীরা তালিকায় নেই।
চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল ১,৭০০ গাজাবাসী আটক ও ২২ জন অপ্রাপ্তবয়স্ককে মুক্তি দেবে। এছাড়া ৩৬০ জন নিহত যোদ্ধার মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ বলেছেন, বন্দি ফেরত পাওয়ার পর গাজায় হামাসের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করা হবে।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা যখন উত্তর গাজায় ফিরে যাচ্ছেন, তারা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র বর্ণনা করছেন। স্থানীয় সংগঠনগুলোর হিসেবে, প্রায় ১৫ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দিতে ৩ লাখ অস্থায়ী তাঁবুর প্রয়োজন হবে।
৩৭ বছর বয়সী রামি মোহাম্মদ-আলি বলেন, “আমরা আনন্দিত যে গাজা সিটিতে ফিরছি, কিন্তু একই সঙ্গে হৃদয়ে দুঃখ আছে। পথে আমরা বহু স্থানে মানবদেহের অবশিষ্টাংশ দেখতে পেয়েছি।”