গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, রবিবার মানবিক সহায়তা সংগ্রহে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালালে অন্তত ৭৩ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
খবরে বলা হয়েছে, উত্তর গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক আসার সময় ৬৭ জন নিহত হন এবং রাফাহর কাছে আরও ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যেখানে আগের দিনই প্রাণহানি ঘটেছিল।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, গাজা সিটিতে প্রবেশের পর তাদের ২৫ ট্রাকের একটি ত্রাণ বহর বিশাল সংখ্যক ক্ষুধার্ত মানুষের মুখোমুখি হয়, যারা পরে গুলিবিদ্ধ হন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবশ্য মৃত্যুর সংখ্যা অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তাদের সেনারা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে সতর্কতামূলক গুলি চালিয়েছিল।
গাজায় খাদ্যসহ মৌলিক চাহিদার ঘাটতির কারণে সহায়তা পেতে আসা মানুষের মৃত্যুর ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এসব ঘটনার জন্য ইসরায়েলি বাহিনীকে দায়ী করছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শেষ দিক থেকে প্রায় ৮০০ সহায়তা প্রত্যাশী মানুষ মারা গেছেন।
গাজা সিটির বাসিন্দা কাসেম আবু খাতের (৩৬) বলেন, “আমি এক বস্তা ময়দা নিতে গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানে দেখলাম হাজার হাজার মানুষ এবং মৃত্যুর ভয়াবহ চাপ।” তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েলি ট্যাংক থেকে এলোমেলো শেল ছোড়া হচ্ছিল এবং স্নাইপাররা আমাদের পশুর মতো শিকার করছিল।”
গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা ৬৭ এবং আরও বাড়তে পারে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এ ধরনের সহিংসতাকে “সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য” বলে উল্লেখ করেছে।
ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা বেসামরিক মানুষের ক্ষতি এড়ানোর চেষ্টা করছে এবং ইতোমধ্যে সেনাদের জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সূচনা হয়। এতে ১,২১৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক। এর জবাবে ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৮,৮৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
সম্প্রতি গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় ইসরায়েলি হামলায় তিনজন নিহত হন। এ ঘটনায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু পোপকে দুঃখ প্রকাশ করেন।
পোপ ফ্রান্সিস রোববার অ্যাঞ্জেলাস প্রার্থনার শেষে গাজায় চলমান যুদ্ধকে “বর্বরতা” হিসেবে আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি ও জীবিত ১০ জন জিম্মি মুক্তির বিষয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছে।
২০২৩ সালের হামলায় নেওয়া ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে এখনও ৪৯ জন গাজায় আটকে রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।