Tuesday, July 15, 2025
Homeঅর্থ-বাণিজ্যপোশাক খাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রপ্তানি সম্ভাবনা ও টেকসই ভবিষ্যৎ

পোশাক খাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রপ্তানি সম্ভাবনা ও টেকসই ভবিষ্যৎ

প্রতিদিন ফ্যাব্রিকের বিশাল অপচয়, অথচ সঠিক রিসাইক্লিং ব্যবস্থা গড়ে তুললে হতে পারে নতুন রপ্তানি সম্ভাবনা

বিশ্বের অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। এই শিল্প দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি এবং লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস। তবে এই সাফল্যের আড়ালে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা থেকে যাচ্ছে— গার্মেন্ট বর্জ্য।

প্রতিটি পোশাক কারখানায় প্রতিদিন হাজার হাজার টুকরো কাপড় অপচয় হয়। কাটিং, সেলাই ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যে পরিমাণ ফ্যাব্রিক পড়ে যায়, সেগুলো সঠিকভাবে সংগ্রহ বা রিসাইক্লিং না হওয়ায় বর্জ্য হিসেবেই ফেলে দেওয়া হয়। এমনকি কিছু পোশাক ক্ষুদ্র ত্রুটির জন্য বাতিল হয়। এসব বর্জ্য কোথাও ফেলা হয়, কোথাও আবার নদী বা ল্যান্ডফিলে চলে যায়, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে বছরে ৪ লাখ টনের বেশি টেক্সটাইল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এই বর্জ্যের বড় অংশ অব্যবস্থাপনার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় বিদেশে গোপনে পাঠিয়ে সেখানে রিসাইক্লিং করা হয়, পরে সেই পণ্যই আমরা উচ্চ দামে আমদানি করি।

এটি শুধু পরিবেশ নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও বড় ক্ষতি। কারণ এই বর্জ্য শুধুই আবর্জনা নয়, বরং এটি এক বিশাল সম্ভাবনা।

আন্তর্জাতিক বড় ব্র্যান্ড যেমন এইচ অ্যান্ড এম, জারা ইত্যাদি এখন টেকসই ও রিসাইক্লড পণ্যের প্রতি আগ্রহী। তারা এমন পোশাক চায় যা পরিবেশবান্ধব। এই চাহিদা বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে। যদি দেশীয়ভাবে রিসাইক্লিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়, তাহলে এই সব ব্র্যান্ডের কাছে রিসাইক্লড পোশাক রপ্তানি করে বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব।

সাভার ও নারায়ণগঞ্জসহ কিছু অঞ্চলে সীমিত আকারে ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোক্তা বর্জ্য ফ্যাব্রিক দিয়ে ব্যাগ, কুশন কাভার, নতুন সুতা এমনকি ফ্যাশন পণ্যও তৈরি করছেন। কিন্তু এই প্রচেষ্টা এখনো অপ্রতুল।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ গার্মেন্টস কারখানায় এখনো রিসাইক্লিং বা বর্জ্য পৃথকীকরণের কোনও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই। রং ও ফ্যাব্রিক টাইপ অনুযায়ী বর্জ্য আলাদা করা হয় না, ফলে প্রতিদিন মূল্যবান ফ্যাব্রিকও নষ্ট হচ্ছে। এতে যেমন অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাও হারিয়ে যাচ্ছে।

যদি সঠিকভাবে রিসাইক্লিং সিস্টেম গড়ে তোলা যায়, তাহলে বর্জ্য থেকে উপযোগী পণ্য তৈরি করে নতুন বাজার সৃষ্টি করা সম্ভব। একই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষা, সম্পদ সাশ্রয় এবং নারী ও তরুণদের জন্য ‘গ্রিন জব’ তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। কাপড় ধোয়া, আলাদা করা, রূপান্তর করা— প্রতিটি ধাপে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে।

তবে এটি সহজ নয়। এর জন্য দরকার পরিকল্পনা, বিনিয়োগ এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বিত সহায়তা। কারখানাগুলোকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করতে হবে। উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও কর সুবিধাও জরুরি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোকেও রিসাইক্লড পণ্যের যথার্থ মূল্য দিতে হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধি। আমাদের বুঝতে হবে, রিসাইক্লড পণ্য মানেই নিম্নমানের নয়, বরং এগুলোই ভবিষ্যতের স্মার্ট ও টেকসই পণ্য।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্যতম গার্মেন্টস উৎপাদক হিসেবে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। এখন সময় এসেছে, আমরা প্রমাণ করব টেকসই পোশাক ও রিসাইক্লিংয়েও আমরা এগিয়ে। আজকের ফেলে দেওয়া কাপড়ই হতে পারে আগামী দিনের একটি সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও শক্তিশালী শিল্পখাতের ভিত্তি।

RELATED NEWS

Latest News