Monday, October 6, 2025
Homeআন্তর্জাতিকফ্রান্সে নতুন সরকার ঘোষণা, রাজনৈতিক সংকট কাটাতে ম্যাক্রোঁর কঠিন পরীক্ষা

ফ্রান্সে নতুন সরকার ঘোষণা, রাজনৈতিক সংকট কাটাতে ম্যাক্রোঁর কঠিন পরীক্ষা

প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুর নেতৃত্বে গঠিত নতুন মন্ত্রিসভায় পুরনো মুখের আধিক্য, তীব্র সমালোচনায় বিরোধীরা

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রবিবার নতুন সরকার ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুর নেতৃত্বে গঠিত এ সরকারে বেশিরভাগই পুরনো মুখ। দেশের গভীর রাজনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে এটি ম্যাক্রোঁর নতুন প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নতুন মন্ত্রিসভার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে লেকর্নুর নিয়োগের প্রায় এক মাস পর। এটি ম্যাক্রোঁর সপ্তম সরকার প্রধান। কিন্তু দেশজুড়ে তীব্র বিভক্ত সংসদ এবং ক্ষুব্ধ বিরোধী দলগুলোর কারণে নতুন সরকার টিকে থাকবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

পুরনো মুখেই ভরসা

প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়ো এবং বিচারমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন তাদের আগের পদে বহাল থাকছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে উত্তেজনার সময়ে ব্রুনো লে মেয়ারকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী ছিলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন ম্যাক্রোঁ-ঘনিষ্ঠ রোলান্ড লেস্কুর, যাকে আসন্ন বছরের কঠোর বাজেট বাস্তবায়নের কঠিন দায়িত্ব নিতে হবে।

সংস্কৃতি মন্ত্রী রাশিদা দাতি, যিনি আগামী বছর দুর্নীতির মামলায় আদালতে মুখোমুখি হবেন, তাকেও রাখা হয়েছে। মোট ১৮ জন মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে, বাকিদের নাম পরে জানানো হবে।

বিরোধীদের ক্ষোভ

ডান ও বামপন্থী বিরোধী নেতারা নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ফার-রাইট নেতা মারিন লো পেন বলেছেন, “এই মন্ত্রিসভা করুণ ও নিরাশাজনক।” তার দলের তরুণ নেতা জর্দান বারদেল্লা বলেছেন, “এটি পুরোটাই পুরনো ধারার পুনরাবৃত্তি, কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেই।”

বামপন্থী সোশ্যালিস্ট নেতা বোরিস ভালোদ বলেছেন, “তারা নির্বাচন হারে কিন্তু শাসন চালিয়ে যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, তবুও সমঝোতা মানতে চায় না।”
হার্ড-লেফট নেতা জঁ-লুক মেলানশোঁ এই মন্ত্রিসভাকে “ডানপন্থী পুরনো মুখের মিছিল” বলে অভিহিত করেছেন।

ক্রমশ বাড়ছে অনিশ্চয়তা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লেকর্নুর সরকার টিকে থাকা নিয়ে ঝুঁকি বাড়ছে। ইউরেশিয়া গ্রুপের ইউরোপ পরিচালক মুজতবা রহমান বলেন, “তার টিকে থাকার সম্ভাবনা দিন দিন কমছে, পরিস্থিতি ক্রমেই অন্ধকারাচ্ছন্ন।”

ইউরোপীয় পলিসি সেন্টারের ফেলো পল টেলর বলেন, “ফরাসি রাজনীতি এখন যুক্তির চেয়ে রাগ ও আবেগে বেশি পরিচালিত হচ্ছে।”

ফ্রান্সের সরকারি ঋণ বর্তমানে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নে গ্রিস ও ইতালির পর তৃতীয় সর্বোচ্চ। ঋণের অনুপাত এখন ইউরোপীয় মানদণ্ডের দ্বিগুণের কাছাকাছি।

অচলাবস্থার মধ্যে দেশ

গত বছরের মাঝামাঝি ম্যাক্রোঁ আকস্মিক নির্বাচনের ডাক দেন নিজের অবস্থান শক্ত করতে, কিন্তু ফল হয় উল্টো। সংসদ তিনটি বিরোধী জোটে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
নতুন প্রধানমন্ত্রী লেকর্নু গত এক মাস ধরে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পার্লামেন্টে বাজেট পাসের সমঝোতা খুঁজছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সংসদের ভোট ছাড়া কোনো বাজেট চাপিয়ে দেবেন না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী সপ্তাহেই যদি লেকর্নু আস্থা হারান, ফ্রান্সে আবারও বড় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

RELATED NEWS

Latest News