ঢাকার উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি চালাচ্ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। এটি ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম একক (solo) ফ্লাইট। যে দিনটিকে পরিবার রাঙাতে চেয়েছিল আনন্দ আর গর্বে, সে দিনই পরিণত হয় শোক আর চোখের জলে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (ISPR) তথ্য অনুযায়ী, ৩৫ নম্বর স্কোয়াড্রনের পাইলট তৌকির ইসলাম ৭৬ বিএএফএ কোর্সের সদস্য ছিলেন। তিনি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর গুরুতর আহত অবস্থায় সিএমএইচের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (ICU) ভর্তি হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানেন।
তৌকির ইসলাম সাগর তাঁর উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের শুরু করেছিলেন পিটি-৬ (PT-6) মডেলের বিমান দিয়ে। ক্যাডেট অবস্থায় ১০০ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইট সময় সফলভাবে শেষ করেছিলেন তিনি। এরপর ১৫তম স্কোয়াড্রনে ৬০ ঘণ্টার মতো ফ্লাইটের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। পরবর্তীতে ৩৫তম স্কোয়াড্রনে যোগ দেন এবং সেখান থেকেই তাঁর প্রথম একক ফ্লাইটের অনুমোদন আসে।
তৌকিরের পরিবার থাকতেন রাজশাহী নগরীর সেক্টর-৩ এ ‘আশ্রয় ভবন’ নামে একটি ভাড়া বাসায়। তাঁর বাবা তোহুরুল ইসলাম আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী, মা সালেহা খাতুন, বোন সৃস্টি ও বোনের স্বামী একই বাসায় থাকতেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন এবং পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে কমিশন পান। কিছুদিন আগেই বিয়ে করেছিলেন এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষককে।
ঘটনার খবর পেয়ে বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে করে তৌকিরের বাবা, মা ও বোনকে রাজধানীতে নিয়ে আসা হয়।
আরও পড়ুন: উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তে ২০ জনের মৃত্যু, মাইলস্টোন স্কুলে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দেশজুড়ে শোক
ISPR জানায়, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিমানটিকে জনবহুল এলাকা এড়িয়ে কম জনবসতিপূর্ণ স্থানে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুলের একটি দুইতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৯ জন নিহত এবং ১৬৪ জনেরও বেশি আহত হন।
ঘটনার পরপরই বিমানবাহিনী একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তারা জানায়, বিমানটি সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে এ কে খন্দকার বিমানঘাঁটি থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের অংশ হিসেবে উড্ডয়ন করে। কয়েক মিনিট পরই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
একদিকে দেশব্যাপী শোক, অন্যদিকে তৌকির ইসলামের পরিবারের জন্য এই ক্ষতি অপূরণীয়। একটি স্বপ্নের যাত্রা—যার জন্য পরিবার গর্ব করছিল, তা রূপ নেয় চিরস্থায়ী বিষাদে। এখন জাতি অপেক্ষায়, এই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ কী ছিল, আর ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা কীভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।