Sunday, June 22, 2025
Homeখেলাধুলাক্লাব বিশ্বকাপে রাজনীতি, চমক ও শো-বিজ—প্রথম সপ্তাহে পাঁচটি আলোচনার বিষয়

ক্লাব বিশ্বকাপে রাজনীতি, চমক ও শো-বিজ—প্রথম সপ্তাহে পাঁচটি আলোচনার বিষয়

দক্ষিণ আমেরিকার উত্থান, ইউরোপের সংগ্রাম, খালি গ্যালারি ও ঝড়বৃষ্টির বাধা

যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ফিফার প্রথম ৩২-দলীয় ক্লাব বিশ্বকাপের প্রথম সপ্তাহ পার হলো রাজনীতি, আবহাওয়া ও চমকজাগানিয়া পারফরম্যান্সের নানা গল্প নিয়ে।

রাজনীতির ছায়া

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে সংস্থাটি। ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা উয়েফা অভিযোগ করে যে, ফিফা সভাপতির ব্যক্তিগত রাজনৈতিক যোগাযোগ ফুটবলের চেয়ে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বৈঠকে অংশ নিতে দেরিতে ফিফা কংগ্রেসে যোগ দেন ইনফান্তিনো। পরে ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে জুভেন্টাস প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়।

এ সময় ট্রাম্প ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলার টিমোথি ওয়া বলেন, “এটা একটু অদ্ভুত ছিল। আমি তো শুধু ফুটবল খেলতে এসেছি।”

এদিকে, ম্যাচ ভেন্যুগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন সংস্থা ICE-এর গোপন সদস্যদের ‘নিরাপত্তা দায়িত্বে’ রাখা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়। যদিও এখনো কোনো দর্শককে আটকানোর তথ্য পাওয়া যায়নি।

ইউরোপীয় দলগুলোর কঠিন সময়

ইউরোপের ক্লাবগুলো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী হলেও টুর্নামেন্টের শুরুটা একদম মসৃণ নয়। এখন পর্যন্ত ইউরোপীয় ক্লাবগুলো ১৬ ম্যাচে জয় পেয়েছে মাত্র ৮টিতে। দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলো দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

প্যারিস সেন্ট জার্মেইন হেরেছে বোটাফোগোর কাছে, আর চেলসি পরাজিত হয়েছে ফ্ল্যামেঙ্গোর কাছে। রিয়াল মাদ্রিদ পর্যন্ত সৌদি ক্লাব আল-হিলালের বিরুদ্ধে জয় পায়নি।

তবে ইউরোপ থেকে অংশ নিয়েছে সর্বোচ্চ ১২টি দল, তাই শেষ ষোলোতে তাদের আধিপত্য বজায় থাকবে বলেই ধারণা।

দর্শকসংখ্যা: মিশ্র চিত্র

অ-empty স্টেডিয়াম নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন হলেও গড় দর্শকসংখ্যা আশাব্যঞ্জক। প্রথম সাত দিনে গড় দর্শক ছিল ৩৬ হাজার ১৩৫ জন, যা গত মৌসুমে লা লিগা, সিরি আ বা লিগ ওয়ানের চেয়ে বেশি।

তবে কিছু ম্যাচে দর্শকসংখ্যা খুবই কম ছিল। যেমন, মামেলোডি সান্ডাউন্স বনাম উলসান ম্যাচে অরল্যান্ডোতে মাত্র ৩,৪১২ জন উপস্থিত ছিলেন। আবার চেলসির একটি ম্যাচে ৭২,০০০ আসনের স্টেডিয়ামে ছিল মাত্র ২২,০০০ দর্শক।

উল্টোদিকে দক্ষিণ আমেরিকার ম্যাচগুলোতে ছিল চমৎকার পরিবেশ। বায়ার্ন মিউনিখ বনাম বোকা জুনিয়র্স ম্যাচে মায়ামিতে ছিল ৬৩,৫৮৭ জন দর্শক। বায়ার্ন কোচ ভিনসেন্ট কোম্পানি বলেন, “এটা একটা অভিজ্ঞতা, একটা সৌভাগ্য।”

আবহাওয়ার বাঁধা

যুক্তরাষ্ট্রের ঘন ঘন বজ্রঝড়ের কারণে বেশ কিছু ম্যাচ ৩০ মিনিট বা তার বেশি সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে হয়েছে। বিশেষ করে অরল্যান্ডো, ইস্ট রাদারফোর্ড ও সিনসিনাটিতে দেখা গেছে এ সমস্যা।

বিশ্বকাপ ২০২৬ সামনে রেখে জাতীয় দলের কোচদের এ বিষয়টি ভাবনায় রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন বৈরী আবহাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

‘শো’ বানানোর চেষ্টায় এনবিএ স্টাইল

প্রতিটি ম্যাচকে বড় শো বানাতে আয়োজকরা বেছে নিয়েছে এনবিএ-স্টাইল। খেলোয়াড়দের নাম ঘোষণা করে আলাদাভাবে মাঠে প্রবেশ করানো হচ্ছে।

চেলসির রোমিও লাভিয়া বলেন, “এটা তো মজার, প্রিমিয়ার লিগেও আসতে পারে।” তবে সবার মত একই নয়। পোর্তোর কোচ মার্টিন আনসেলমি বলেন, “এইটা একটু ধীর মনে হয়। শুধু দেখানোর জন্য দেখানো, বিশেষ কোনো মানে নেই।”

চলমান টুর্নামেন্ট শুধু ফুটবল নয়, বরং রাজনীতি, পরিবেশ, দর্শকপ্রবণতা এবং সংস্কৃতির মিশ্রণে ভিন্নরকম এক অভিজ্ঞতা হয়ে উঠছে। বিশ্বকাপ ২০২৬ সামনে রেখে এটি অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সহায়ক হতে পারে।

RELATED NEWS

Latest News