গাজায় শুধু ক্ষুধা নেই, সেখানে মানুষের জীবনযাত্রাকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত খাদ্যনিধন চলছে। এটি কোনো স্বাভাবিক খাদ্য সংকট নয়, এটি একটি মনুষ্য নির্মিত দুর্ভিক্ষ, যেখানে পুরো জনগোষ্ঠীর খাদ্য সরবরাহ ইচ্ছাকৃতভাবে আটকানো হয়েছে। এই অবরোধ পরিস্থিতিতে প্রতিটি খাবার পেতে লড়াই করতেই হয়।
মানবাধিকার কর্মী ও পেডিয়াট্রিক চিকিৎসক অকসা দুররানি, যিনি মাত্র সাত পাউন্ড খাবার নিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছিলেন, সেখানে তিনি শিশুদের কষ্টকর অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। অপুষ্টির ফলে হাত পা হারানো, তীব্র দগ্ধ অবস্থার মতো ভয়াবহ অবস্থা দেখা যাচ্ছে। শিশুদের চিৎকার শুধু ব্যথা উপশমের জন্য নয়, তারা খাবারের জন্য চিৎকার করছে।
গাজায় দারিদ্র্যের মাত্রা এখন পৌঁছেছে স্তর ৫, যা পুনরুদ্ধার অসম্ভব এক চরম অবস্থান। এই স্তরে খাদ্যের অভাব শুধু পুষ্টির ঘাটতি নয়, এটি মস্তিষ্ক, শরীর এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জেনেটিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মা দুধ পান করতে পারেন না, শিশুরা স্থায়ী শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এমন নির্মম খাদ্যনিধন আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য। কিন্তু অবরোধ চলছেই, খাদ্য সাহায্য সীমিত হচ্ছে, মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা রয়েছে। বিশ্ব কিছু প্রতীকী এয়ারড্রপ নিয়ে আলোচনা করছে, যা বাস্তব চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এই প্যাকেটগুলো অনেক সময় ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়ে পড়ে গিয়ে আহত বা মৃত্যুও ঘটায়।
খাদ্য পাওয়ার অধিকার মানবাধিকার। গাজার এই খাদ্যনিধন কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের অংশ। এই অবরোধ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ভেঙে দিতে এবং তাদের ভবিষ্যত বিলীন করতে প্ররচিত একটি ধীর গতি যন্ত্র।
রাফাহের ধ্বংসস্তূপ থেকে সীমানার ওপারে উর্বর জমি উজ্জ্বলভাবে প্রস্ফুটিত হচ্ছে। একপাশে ক্ষুধার্ত মানুষ, অন্য পাশে প্রচুর খাদ্য। মানবাধিকারকর্মীরা জানিয়েছে, গাজা থেকে বের হওয়ার সময় তারা দেখেছেন ইসরায়েলি সৈন্যরা লাঞ্চ উপভোগ করছে, যা পুরো বিশ্বকেই বিব্রত করা উচিত।
যুদ্ধের কারণে ক্ষুধাকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। প্রতিদিন অবরোধ কাঁটা মেরে গাজার বুকে। সাহায্য দেরি হলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে, শুধু বোমা থেকে নয়, ক্ষুধা থেকে এবং দুর্বল দেহ থেকে।
ইতিহাস আমাদের বিবৃতি নয়, নীরবতা ও অবহেলা মনে রাখবে। গাজার মানুষ চায় প্রতীকী খাদ্য নয়, সীমান্ত খোলার মাধ্যমে অবাধ মানবিক সহায়তা। তারা চায় অবরোধ শেষ। বিশ্বকে মানবতা বেছে নিতে হবে নিষ্ক্রিয়তার চেয়ে।
এক জাতিকে ক্ষুধার্ত করা যুদ্ধ কৌশল নয়, এটি গণহত্যার এক নিরব চলমান অস্ত্র। গাজায় মানবতা চোখের সামনে ক্রমশ রক্তপাত করছে।