২০২৪ সালের ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যুবদলকর্মী আব্দুল কাইয়ুম আহাদ হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মো. সানাউল্লাহর আদালতে সন্ধ্যা ৮টা ১৫ মিনিটে শুনানি শুরু হয় এবং ২০ মিনিট পর কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এর আগে একইদিন ধানমণ্ডির নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. খালেদ হাসান খায়রুল হকের রিমান্ড আবেদন করেন। মামলার এজাহার অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হন যুবদলকর্মী আহাদ। তার মুখ ও বুকে গুলি করা হয় এবং ছুরি, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে আঘাত করা হয় বলে অভিযোগ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেন, সে সময় যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আবুল হোসেন সরাসরি ‘ব্রাশ ফায়ার’ অস্ত্র দিয়ে আহাদের পায়ে গুলি করেন। আহত অবস্থায় আহাদকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ২০২৫ সালের ৬ জুলাই আহাদের বাবা মো. আলাউদ্দিন যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ১ হাজার থেকে ২ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এফআইআরে খায়রুল হক ৪৪তম অভিযুক্ত।
এই গ্রেপ্তার ও বিচারিক হেফাজতে পাঠানো দেশের বিচার ও রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, খায়রুল হকই প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন সময়ে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করেছিলেন। সেই সিদ্ধান্তই পরবর্তীতে বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার এক মৌলিক পরিবর্তনের ভিত্তি হয়ে ওঠে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মামলার তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এবং বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও শাসন ব্যবস্থার প্রশ্নে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে।