আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ২০০৮ সালের পর এটি হবে ইইউর প্রথম পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ মিশন।
মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন জামুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এই তথ্য জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর এই মিশনে ১৫০ থেকে ২০০ সদস্য থাকবেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন নির্বাচন শুরুর ছয় সপ্তাহ আগে এসে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করবেন, আর বাকিরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে যোগ দেবেন।
“২০০৮ সালের পর এই প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে,” বলেন রাষ্ট্রদূত মিলার। তিনি আরও জানান, ভোটের সময় স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মোতায়েনেও ইইউ সহায়তা দেবে।
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে দুপক্ষ শাসনব্যবস্থা, সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন প্রস্তুতি, বিচার ও শ্রম সংস্কার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক এবং দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত মিলার জুলাই ন্যাশনাল চার্টারকে “গুরুত্বপূর্ণ দলিল” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তিনি সম্প্রতি অনুমোদিত শ্রম আইন সংস্কার এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জোরদারের উদ্যোগকেও “উল্লেখযোগ্য সাফল্য” হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, “এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশে একটি মুক্ত, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের পথে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।” মিলার আরও বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে “দেশের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের একটি সুযোগ।”
বৈঠকে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় ইইউর অব্যাহত সহায়তার আশ্বাস দেন।
দুপক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও গভীর করার উপায়, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির সম্ভাবনা এবং বিমান ও নৌ খাতে নতুন সুযোগ নিয়ে আলোচনা করে। মানব পাচার ও অবৈধ অভিবাসন রোধেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে একমত হয় উভয়পক্ষ।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনাল উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য ডেনমার্কের বৈশ্বিক শিপিং প্রতিষ্ঠান এপি মোলার–মায়ের্সকের সঙ্গে বাংলাদেশ একটি চুক্তি সই করতে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে লালদিয়াকে অঞ্চলের অন্যতম আধুনিক টার্মিনালে রূপ দিতে চায়।
বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশ, প্রার্থীদের যোগ্যতা এবং মানবাধিকার নিশ্চিতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
