ইংল্যান্ডে চলন্ত ট্রেনে ছুরি হামলার ঘটনায় ৩২ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ যুবককে একমাত্র সন্দেহভাজন হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া অপর এক ব্যক্তিকে রবিবার কোনো অভিযোগ ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ পুলিশ জানিয়েছে, এই ছুরি হামলায় ১১ জন হাসপাতালে ভর্তি হলেও এটি কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা নয়। রবিবার রাতের শেষ দিকে আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে হামলাকারীকে থামাতে গিয়ে আহত হওয়া ট্রেনের এক ক্রু সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ জানায়, “গোয়েন্দারা ট্রেনের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করেছে এবং এটা স্পষ্ট যে তার পদক্ষেপ ছিল বীরত্বপূর্ণ এবং নিঃসন্দেহে তিনি অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন।”
শনিবার পূর্ব ইংল্যান্ডে এই গণছুরিকাণ্ডের পর প্রাথমিক তদন্তে কাউন্টার-টেরোরিজম পুলিশ সহায়তা করলেও পরে পুলিশ জানায়, ঘটনাটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিল এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। হামলার পেছনের কারণ এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তির অতীত সম্পর্কে জানতে তদন্ত চলছে বলে জানানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ছুরিও উদ্ধার করা হয়েছে।
ডেপুটি চিফ কনস্টেবল স্টুয়ার্ট কান্ডি এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের তদন্ত দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে এবং আমরা নিশ্চিত যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য কাউকে আমরা খুঁজছি না।”
পুলিশ একমাত্র সন্দেহভাজনকে লন্ডনের ১০০ মাইল উত্তরের পিটারবোরোর বাসিন্দা একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে বর্ণনা করেছে, যিনি সেখান থেকেই ট্রেনে উঠেছিলেন। ট্রেনটি লন্ডনের প্রায় ৮০ মাইল উত্তরে হান্টিংডনে জরুরি থামার পর সশস্ত্র পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এটিকে একটি “ভয়াবহ ঘটনা” এবং “গভীর উদ্বেগজনক” বলে অভিহিত করেছেন, অন্যদিকে রাজা চার্লস বলেছেন তিনি “সত্যিই আতঙ্কিত ও মর্মাহত”।
ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে গত এক দশকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ৮৭ শতাংশ বেড়েছে। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, শুধুমাত্র গত বছরেই ৫৪,৫৮৭টি ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি এবং ইউরোপের সর্বোচ্চ হারগুলোর মধ্যে অন্যতম।
প্রত্যক্ষদর্শী ওলি ফস্টার বিবিসিকে জানান, তিনি শনিবার সন্ধ্যায় লন্ডনগামী ট্রেনে ছিলেন, যখন একজন তার পাশ দিয়ে দৌড়ে যাওয়ার সময় বলেন যে এক ব্যক্তি “সবাইকে, সবকিছুকে” ছুরিকাঘাত করছে। তিনি বলেন, “আমি একটি চেয়ারে হাত রাখতেই দেখি আমার হাত রক্তে ভেজা। এরপর চেয়ারের দিকে তাকিয়ে দেখি পুরোটা রক্তে মাখা। সামনে তাকিয়ে দেখি সব চেয়ারেই রক্ত।”
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী স্কাই নিউজকে জানান, সন্দেহভাজনকে একটি বড় ছুরি নাড়তে দেখা গিয়েছিল এবং পরে পুলিশ তাকে টেজার দিয়ে নিবৃত্ত করে।
