হবিগঞ্জ, ২৯ মে, ২০২৫ (ডেপ্রবা) : হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার সজল গ্রামে অবস্থিত দত্ত পরিবার একসময় ভারতীয় উপমহাদেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে এক গৌরবময় নাম ছিল। ব্রিটিশ আমলে এই পরিবারের অন্তত ১২০ জন সদস্য প্রথম শ্রেণির গ্যাজেটভুক্ত কর্মকর্তা হিসেবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউ ছিলেন জেলা প্রশাসক, কেউবা কর কমিশনার বা সাবডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট।
দত্ত পরিবারকে এক সময় ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তাদের বহু প্রজন্ম দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন, যা উপমহাদেশের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত।
তবে সময়ের স্রোতে এই পরিবারের প্রায় সব সদস্যই দেশত্যাগ করেছেন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে পরিবারটির সদস্যরা ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ছাড়তে শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়েও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। বর্তমানে দত্ত পরিবারের কেউই সজল গ্রামে বসবাস করেন না।
গ্রামের মানুষ এখনো স্মরণ করেন লাল ইটের দালানটি, যা স্থানীয়ভাবে ‘দত্তবাড়ি’ নামে পরিচিত। ভবনটি বর্তমানে জরাজীর্ণ এবং অযত্নে পড়ে আছে। যদিও কিছু অংশ উপজেলা প্রশাসনের দপ্তর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, সম্পূর্ণ স্থাপনাটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য মতে, দত্তবাড়িটি এক সময় লাখাই উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রমের কেন্দ্র ছিল। অনেকে বিশ্বাস করেন, ভবনটি শুধু একটি স্থাপনা নয় বরং বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি মূল্যবান অংশ। তাদের দাবি, দত্তবাড়িকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হোক।
২০০৮ সালে ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার ভবনটি পরিদর্শন করেন এবং একটি হাসপাতাল নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতা ও স্থানীয় প্রতিকূলতায় প্রকল্পটি থেমে যায়।
স্থানীয়রা মনে করেন, ভবনটি সংরক্ষিত হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারবে কীভাবে একটি পরিবার শিক্ষা, প্রজ্ঞা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা দিয়ে ভারতবর্ষের শাসনে অবদান রেখেছিল। সরকারের কাছে তাঁরা ভবনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে যথাযথ সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।