ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (ডেপ্রবা) : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এস এম শাহারিয়ার আলম সাম্যর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গত ১৩ মে মধ্যরাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খুন হন তিনি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার পরিবার এই হত্যাকে ‘পরিকল্পিত’ বলে দাবি করেছে।
ডিএমপি কমিশনার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সাম্য সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থান করছিলেন। সেখানে একটি মাদক চক্রের সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়। চক্রটির এক সদস্য রাব্বির কাছে থাকা ‘ট্রেজার গান’ নামক ইলেকট্রিক শক ডিভাইস নিয়ে কৌতূহল দেখান সাম্য। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে মাদক চক্রের অন্যান্য সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যেই ঘটে সাম্যর হত্যাকাণ্ড।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলো: রাব্বি, দুই মেহেদী, পাপেল, রিপন, সোহাগ, রবিন, হৃদয় ও সুজন। তাদের মধ্যে রিপন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি জানান, মূল অভিযুক্তকে রমনা গেট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কাজ করেন তিনি। এরপর ঘটনাস্থলে আরও কয়েকজন নজরদারি করছিল এবং অন্তত ৫ থেকে ৭ জন সরাসরি হামলায় অংশ নেয়।
সাম্যর বড় ভাই বলেন, “ঘটনার ধরণ দেখে বুঝাই যায় এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যা। এত সমন্বিতভাবে কেউ কক্সবাজার থেকে এসে হামলায় অংশ নেবে, এটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়।”
হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিবাদে উত্তাল হয় ঢাবির শিক্ষার্থীরা। নানা মহল থেকে দ্রুত বিচার ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি ওঠে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং সেই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পক্ষান্তরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যাতে করে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার জানান, তদন্ত এখনো চলমান এবং আরও তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, এই হত্যাকাণ্ড কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত নয় বরং এটি উদ্যানে সক্রিয় মাদক কারবারীদের অভ্যন্তরীণ সহিংসতা থেকে সৃষ্ট ঘটনা।
তবে ভুক্তভোগী পরিবার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, হত্যার মোটিভ স্পষ্টভাবে তুলে ধরার পাশাপাশি মূল পরিকল্পনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।