Wednesday, July 23, 2025
Homeঅর্থ-বাণিজ্যদুই মাসে ৬৫০ পয়েন্ট বাড়ল ডিএসই সূচক, পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত অর্থনীতিতে

দুই মাসে ৬৫০ পয়েন্ট বাড়ল ডিএসই সূচক, পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত অর্থনীতিতে

মুদ্রাস্ফীতির পতন, টাকার মান বৃদ্ধি এবং সুদের হার কমার প্রভাবে পুঁজিবাজারে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবণতা

গত দুই মাসে দেশের পুঁজিবাজারে গুরুত্বপূর্ণ উল্লম্ফনের মধ্যে দিয়ে ডিএসই সূচক বেড়েছে ৬৫০ পয়েন্টেরও বেশি। এর ফলে সূচকটি পৌঁছেছে গত আট মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইএক্স সূচক গতকাল ৫,২৭০ পয়েন্টে পৌঁছেছে, যা ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ। তখন সূচক ছিল ৫,৩০০ পয়েন্টে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে সূচক ছিল ৪,৬১৫ পয়েন্টে, যা ছিল গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সেখান থেকে ১৪ শতাংশ বা ৬৫০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই সময়ে বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০২,৮৯৮ কোটি টাকায়, যা ৬০,৯০৭ কোটি টাকা বা ৯ শতাংশের প্রবৃদ্ধি।

ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী শাহিদুল ইসলাম বলেন, “এটি কোনো বুল রান নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে যে মূল্য সংশোধন ছিল, এখন তার সংশোধনী ফিরছে।”

তিনি বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার হ্রাস পাওয়াই সূচক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আগে যা ছিল ১৩ শতাংশের কাছাকাছি, এখন তা নেমে এসেছে ১০.৪৮ শতাংশে।”

সুদ কমার ফলে বড় বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে ফিরে আসছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল হওয়াও একটি বড় কারণ বলে জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত সপ্তাহে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৪৮৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে প্রতি ডলারে টাকার মান ২ টাকা বাড়ে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ৮.৪৮ শতাংশে নেমেছে, যা ২৭ মাস পর প্রথমবার ৯ শতাংশের নিচে এসেছে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “মুদ্রাস্ফীতির পতন, অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং কম মূল্যায়িত শেয়ার বাজারে আস্থার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত আর্থিক চিত্র সামনে এলে বাজারে প্রভাব পড়তে পারে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে কিছু এনবিএফআই ‘রেড লিস্টে’ রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “বাজারে টেকসই উন্নয়নের জন্য ভালো আর্থিক ভিত্তির কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি জরুরি। বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বাড়াতে এটি অপরিহার্য।”

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে তিনি বলেন, “টাকা স্থিতিশীল হওয়ায় কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারী ফিরতে পারেন। আবার যাদের অর্থ দীর্ঘদিন আটকে ছিল, তারা বেরিয়ে যেতে পারেন।”

ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মো. রাশেদুল হাসান বলেন, “রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রা স্থিতিশীল হচ্ছে। ফলে পোর্টফোলিও বিনিয়োগও বাড়বে।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “মুদ্রাস্ফীতি যদি আরও কমে অক্টোবরের মধ্যে ৬ শতাংশে নামে, তবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আয়ও বৃদ্ধি পাবে।”

বর্তমানে বাজারের পুনরুদ্ধারের যে চিত্র, সেটিকে তিনি ভবিষ্যতের জন্য একটি “শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের প্রাথমিক ইঙ্গিত” বলে উল্লেখ করেন।

তবে বাজার আবার আগের অবস্থানে ফিরে যাবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস, সবচেয়ে খারাপ সময়টা পার হয়ে গেছে।”

RELATED NEWS

Latest News