Sunday, October 26, 2025
Homeজাতীয়ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক ও ভবঘুরে বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে বাম সংগঠনের মিছিল, প্রোক্টরিয়াল...

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক ও ভবঘুরে বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে বাম সংগঠনের মিছিল, প্রোক্টরিয়াল সদস্য আহত

‘ভবঘুরে’ উচ্ছেদ অভিযানে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভে হামলার অভিযোগ, প্রশাসনের জরুরি বৈঠকের আহ্বান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মাদক ও ভবঘুরে বিরোধী চলমান অভিযানের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরিয়াল টিমের এক সদস্য হামলার শিকার হয়ে আহত হন।

প্রায় রাত ১০টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিলটি শুরু হয়। এতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র মৈত্রীর নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তারা উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হকারদের বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানান।

ঢাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, “বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না করে হকার ও দোকানদারদের উচ্ছেদ করা অন্যায়। আমরা এই অবিচারের প্রতিবাদ করছি।”

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মিছিলে অংশ নেন সাবেক প্রোক্টরের দপ্তরের ‘টোকেনম্যান’ ও চালক শামীম, যিনি অতীতে চাঁদাবাজির অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (DUJA) দপ্তর সম্পাদক তৌসিফুল ইসলাম বলেন, “এই চক্রটি নতুন নয়। গত বছরও তদন্তে প্রমাণিত হয়েছিল, তারা অবৈধ দোকান ও ভবঘুরেদের থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করত। তখনই শামীমকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এখন সেই ব্যক্তি আবারও সক্রিয়।”

অনেক শিক্ষার্থী এই বিক্ষোভকে “ভণ্ডামি” ও “নিরাপত্তার জন্য হুমকি” বলে মন্তব্য করেছেন। ছাত্র নূর নবী প্রশ্ন তোলেন, “বাইরের লোকেরা কীভাবে ক্যাম্পাসে মাইক নিয়ে মিছিল করার সাহস পায়? এসব দোকানই বাইরের লোকের আনাগোনা বাড়ায়।”

আরেক ছাত্র ইয়াসিন আহমেদ আপু বলেন, “যারা ভবঘুরে উচ্ছেদ নিয়ে নাটক করছে, তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভুলে গেছে। আমরা জুবায়ের ভাইয়ের পাশে আছি।”

এর আগে সন্ধ্যায় প্রোক্টরিয়াল টিমের এক সদস্যের ওপর হামলা হয়। নিরাপত্তার কারণে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।

ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে এবং রোববার সকালে ডিইউসিসু প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের ঘোষণা দেয়।

ডিইউসিসু সমাজসেবা সম্পাদক এ বি জুবায়ের বলেন, “বিকেলে অবৈধ দোকান উচ্ছেদের পরই বাম সংগঠনগুলো হকারদের নিয়ে মিছিল করেছে। এটা নিছক ভণ্ডামি। এখনই ব্যবস্থা না নিলে প্রশাসনকেই দায় নিতে হবে।”

ডিইউসিসু সাধারণ সম্পাদক এস এম ফারহাদ বলেন, “ঢাবির অংশীদার শুধু শিক্ষক, ছাত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারী—এখানে মাদক ব্যবসায়ী বা অবৈধ হকারের জায়গা নেই। হয় ডিইউসিসু থাকবে, নয় এই সিন্ডিকেট।”

সহ-সভাপতি শাদিক কায়েম বলেন, “ছাত্রলীগের পতনের পর ক্যাম্পাসে নতুন এক অপরাধচক্র গড়ে উঠেছে, যারা ‘হকার’ আর ‘ভবঘুরে’র আড়ালে মাদক ও চাঁদাবাজি চালায়।”

প্রোক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তবে শুধু প্রোক্টরিয়াল টিমের পক্ষে সম্ভব নয়—সিটি করপোরেশন, মেট্রোরেল পুলিশ ও ছাত্রদের সহযোগিতা দরকার।”

তিনি জানান, রোববার সকালে বৈঠকে ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হবে এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠন বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন সাতটি পরিত্যক্ত খাবারের দোকান রাতে ভবঘুরে ও মাদক ব্যবসায়ীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, অন্তত ৫০–৬০ জনের একটি সক্রিয় মাদকচক্র সেখানে কাজ করছে।

এদিকে ডিইউসিসু সদস্য সর্বমিত্র চাকমা সতর্ক করে বলেন, “যদি প্রশাসন এই বাম সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, আমি পদত্যাগ করব।”

RELATED NEWS

Latest News