ঢাকা ও মস্কোর মধ্যে আরও জোরালো সম্পর্ক গড়ে উঠলে তা বাণিজ্য, জ্বালানি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় উভয় দেশের জন্যই উপকার বয়ে আনবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি. খোজিন।
রবিবার (১৫ জুন) রাজধানীর রাশিয়ান দূতাবাসে রাশিয়া দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সেখানে তিনি দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ককে “উন্নতির পথে” বলে উল্লেখ করেন এবং পারমাণবিক শক্তি, গ্যাস অনুসন্ধান ও বাণিজ্যে যৌথ অগ্রগতি তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “গত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্ব, সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। আজ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, যেখানে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।”
তিনি জানান, গম ও সার রাশিয়ার প্রধান রপ্তানি পণ্য হিসেবে বাংলাদেশে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি ভোলায় গাজপ্রম কর্তৃক খননকৃত ২০টি কূপ এবং আবিষ্কৃত দুটি গ্যাসক্ষেত্র রুশ জ্বালানি সহযোগিতার উদাহরণ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথাও বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। রাষ্ট্রদূত বলেন, রসাটমের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এটিকে বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা ও যৌথ অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও পেমেন্ট সিস্টেমে পরিবর্তনের মধ্যেও রাশিয়ান অর্থনীতি যে স্থিতিশীল রয়েছে, তা-ও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত খোজিন। তিনি বলেন, “২০২৩ সালে রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে।”
ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের ‘সমান ও অবিভাজ্য’ নিরাপত্তা কাঠামোর প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “SAARC, BIMSTEC ও IORA-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো বৈশ্বিক দক্ষিণের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফউজুল কবির খান। তিনি কৃষি ও জ্বালানি খাতে আরও সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
আয়োজনের অংশ হিসেবে পরিবেশিত হয় ‘মস্কো রুশ গানের দল’-এর একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং ‘দ্য ইমেজেস অব রাশিয়ান হিস্ট্রি’ শিরোনামে রসাটমের তত্ত্বাবধানে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশে বসবাসরত রুশ নাগরিকরা অংশগ্রহণ করেন। এতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করার আগ্রহ প্রকাশ পায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যেও।