ঢাকার একটি আদালত স্বাস্থ্য খাতে প্রভাবশালী বিতর্কিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (এএসি) দায়ের করা মামলায় ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রিমান্ড ও জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
মিঠুর আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শুনানিতে এএসি সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে। অপরদিকে প্রতিরক্ষা পক্ষ জামিনের আবেদন এবং রিমান্ড বাতিলের আবেদন করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মিঠুকে কারাগারে পাঠান।
এর আগে বুধবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি ওয়ারি জোনের একটি দল। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয় বলে ডিএমপি’র উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান।
৫৫ বছর বয়সী মিঠু দীর্ঘদিন স্বাস্থ্য খাতে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছিলেন। ওই সিন্ডিকেটে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং হাসপাতালের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি ১৬টি মেডিকেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চালাতেন। এর মধ্যে লেক্সিকন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনোক্র্যাট নামে দুটি প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে সক্রিয় ছিল। হাসপাতালের দরপত্র ও ক্রয় প্রক্রিয়া প্রভাবিত করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে বিজয়ী করা হতো।
শুধু তাই নয়, নিম্নমানের বা নকল সরঞ্জাম সরবরাহ করা হতো। ইউরোপীয় বা আমেরিকান পণ্যের পরিবর্তে প্রায়ই চীনা ও ভারতীয় পণ্য দেওয়া হতো। কোভিড-১৯ মহামারির সময় নিম্নমানের মাস্ক ও পিপিই সরবরাহের ক্ষেত্রেও তাদের বিরুদ্ধে বড় আকারের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, রংপুরের মহিপুর এলাকার বাসিন্দা মিঠু সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে প্রবেশ করেন। পরে ধীরে ধীরে তিনি এই খাতের প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিতি পান।
২০১৯ সালের অক্টোবরে দুর্নীতি দমন কমিশন মিঠুর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তাকে তখনই বিতর্কিত ঠিকাদার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল এবং বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।
আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের শুনানিতে মিঠুর জামিন ও রিমান্ডের বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবে।