ঢাকা শহরের বাতাসে ভাসে ধোঁয়া, ধুলা আর বিষাক্ত গ্যাস। গাড়ির কালো ধোঁয়া আর শহরতলীর কারখানার জ্বালানি দূষণ মিলে এ শহরকে এক বিষাক্ত আবরণে মুড়ে রেখেছে।
সকালে সূর্যের আলো যখন নরমভাবে শহরের উপর ছড়িয়ে পড়ে, তখনও জানালার পাশে বসে এক কাপ চায়ের সঙ্গে নির্মল বাতাস উপভোগ করা যেন দুঃস্বপ্ন। চোখে দেখা যায় না, কিন্তু প্রতিনিয়ত আমাদের ঘিরে আছে অদৃশ্য এক ভারী আবরণ, যা নিঃশ্বাস নেওয়া কঠিন করে তোলে।
তবে ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের দিকে বেরিয়ে যাওয়া যেন চোখ খুলে দেয়। এমনকি শরীরও টের পায় পার্থক্যটা। ফুসফুস হঠাৎ যেন হালকা হয়ে যায়, নিঃশ্বাস সহজ হয়ে ওঠে, মনে হয় বাতাস যেন প্রাকৃতিক এক ছাঁকনিতে ছেঁকে নির্মল হয়ে গেছে।
শহরের দালান-কোঠার ভিড় থেকে সবুজ প্রকৃতি আর পাখির ডাকের মধ্যে প্রবেশ মানসিকভাবেও প্রশান্তির সৃষ্টি করে।
এ অভিজ্ঞতা শুধু অনুভবের বিষয় নয়, পরিসংখ্যানেও স্পষ্ট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, PM2.5 এর আদর্শ মান ৫ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার। অথচ ঢাকায় ২০২৫ সালের জুনে এই মান দাঁড়ায় ৫১.৭১। এমনকি সাধারণত এটি ২৮১ পর্যন্ত গিয়েছে। সর্বশেষ ২৩ জুন বিকাল ৩টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ছিল ৮৬১, যা দিনের অন্য সময়ে ১৩০২-তেও উঠেছিল। অথচ ০-৫০ AQI মানক ও স্বাস্থ্যকর।
গ্রামের নির্ভুল পরিসংখ্যান না থাকলেও, ১৬৩টি বায়ু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় সহজেই অনুমান করা যায় গ্রামীণ এলাকা অনেক বেশি নির্মল। তবে ক্রমাগত শিল্পায়ন, পুরনো যানবাহনের ব্যবহারে সেই নির্মলতা হুমকির মুখে।
তবুও এখনও গ্রামের বাতাস ঢাকার তুলনায় অনেক ভালো।
তাই ছুটির দিনে শুধু আত্মীয়স্বজন দেখাই নয়, বরং ফুসফুসকে বিশ্রাম দেওয়ারও এক সুযোগ। কাশি, হাঁপানি, নিঃশ্বাসে কষ্ট – সব যেন কয়েক দিনের জন্য থেমে যায়। প্রকৃতির কোলে কিছু সময় কাটানো মানে নিজেকে আবার নতুন করে খুঁজে পাওয়া।
তবে এই নির্মলতা ধরে রাখতে হলে দরকার হবে সুপরিকল্পিত শিল্পায়ন, যানবাহনের আধুনিকায়ন এবং সর্বোপরি, সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিবেশ রক্ষার পদক্ষেপ।
তাই, পরবর্তী ছুটির দিনটিতে শহরের ট্র্যাফিক নয়, গ্রামের মাঠঘাট বেছে নিন। নিঃশ্বাস নিন পুরো বুক ভরে – কারণ এই নির্মলতা সোনার চেয়েও দামী।
